খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিয়ের কথা বলে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ওই নারী (২৮) শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এই অভিযোগ করেন। পরে তাকে হাসপাতাল থেকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এ নিয়ে থানায় কোনও অভিযোগ করা হয়নি।
ঘটনাটি নিয়ে রবিবার দিনভর আলোচনা চলছিল। পুলিশ ঘটনাটি সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে শুনেছেন বলে জানায়। তবে থানায় কোনও অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন সোনাডাঙ্গা থানার পরিদর্শক।
রবিবার বিকালে মিডিয়া ও মানবাধিকারকর্মীদের সামনে ওই নারীকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া ও অপহরণের বিষয়টি আলোচনায় ঘি ঢালে। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই ইউপি চেয়ারম্যানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
যদিও পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে আসলে ঘটনাটি কী হচ্ছে। এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সামনে এসেছে আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েই খুলনার ডুমুরিয়ায় সরকারি দলে বিভেদ ও বিভাজন সবার চোখে পড়েছে। আর আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে এ বিরোধ আরও দানা বাঁধতে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এমনটি ঘটতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাত ১০টায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি হওয়া এক নারী অভিযোগ করেন, তিনি ধর্ষণের শিকার। ডুমুরিয়া উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ গত চার/পাঁচ বছর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে আসছিল। সর্বশেষ ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শাহপুর বাজারে ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের নিজস্ব কার্যালয়ে ধর্ষণের শিকার হন ওই নারী। এরপর তিনি বিয়ের জন্য চাপ দেন। এ সময় বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ওই নারী ওসিসিতে এসে অভিযোগ করেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরএমও ডা. সুমন রায় জানিয়েছেন, তার পরীক্ষা করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনে জানা যাবে।
ডুমুরিয়া থানার ওসি সুকান্ত সাহা বলেন, এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কেউ থানায় কোনও অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
এদিকে রবিবার বিকালে ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সামনে থেকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। ওই নারীর স্বজন, গণমাধ্যম ও মানবাধিকারকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় অপহরণকারীরা যমুনা টিভি ও এসএ টিভির ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। মাইক্রোবাস যাওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামানকে আটকে রাখেন স্থানীয়রা। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আটক গাজী তৌহিদ ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদের চাচাতো ভাই।
বাংলাদেশ মানবাধিকবার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ওই নারীকে আইনি সহায়তা দিতে সংস্থার পক্ষে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রবিবার বিকালে হাসপাতালের ওসিসিতে যান। সেখানে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ওসিসি থেকে অপরিচিত এক ব্যক্তি ওই নারীর ছাড়পত্র নিচ্ছিলেন। তার পরিচয় জানতে চাইলে ওসিসির দায়িত্বরত ব্যক্তিরা সবাইকে বের করে দেন। বাইরে বের হওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ১৫/২০ জন ব্যক্তি জোর করে ওই নারী ও তার মাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় দুই সাংবাদিক আহত হন।
তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার নারীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল ওসিসি। সেখান থেকে ভুক্তভোগীকে যেভাবে অপহরণ করা হলো তাতে আমরা আতঙ্কিত। পুরোটা সময় ওসিসির নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ সদস্যরা নীরব ছিলেন। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (সোনাডাঙ্গা) আবু নাসের মো. আল আমিন বলেন, আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, ওই নারী তার মায়ের সঙ্গে গেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। গাজী তৌহিদ পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত রাত থেকেই ওসিসিসহ হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে অপরিচিত ব্যক্তিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। সকাল থেকে ওসিসির সামনে অবস্থান নেন ১২/১৫ ব্যক্তি। বিকালে অপহরণের সঙ্গে তারাই যুক্ত ছিলেন।
ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমদ দাবি করেন, এ ধরনের কোনও কিছু তার জানা নেই।
সোনাডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি ওই নারী হাসপাতাল থেকে গাড়িতে করে তার মায়ের বাড়ি গেছেন। অপহরণ বা ছিনতাইয়ের শিকার হননি। আর গাজী তৌহিদ একজন জনপ্রতিনিধি। জনতা তাকে পুলিশে দিলে তাকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়। কোনও অভিযোগ না পেলে তাকে পুলিশ হেফাজতে রাখা সম্ভব হবে না।