ফুটবলে আগ্রহ ছিল না মা-বাবার, সেই সাগরিকাই এখন পাদপ্রদীপের আলোয়

বাংলাদেশে মেয়েদের খেলাধুলায় আসা নিয়ে শুরুতে অনেক আপত্তি থাকে অভিভাবকদের। বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সন্তান যখন সাফল্য পেতে শুরু করেন, তখন সবচেয়ে বেশি খুশি হন মা-বাবাই। এই যেমন সাফ অনূর্ধ-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের বিপক্ষে জোড়া গোলে বাংলাদেশকে জয় এনে দেওয়া মোসাম্মত সাগরিকার কথাই ধরুন। শুরুতে তার ফুটবল খেলাতে মোটেও সায় ছিল না বাবা-মায়ের। সেই সাগরিকাই এখন পাদপ্রদীপের আলোয়।

শুক্রবার শীতের রাতে কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে হাজারো দর্শকের সামনে দাপট দেখিয়ে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম গোল পেতে সময় লেগেছে যদিও। ৪০ মিনিটে ডেডলক ভাঙেন ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়ে সাগরিকা। দুই মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মুনকি আক্তার। দ্বিতীয়ার্ধে সুকরিয়া মিয়া নেপালকে ম্যাচে ফেরালেও সাগরিকার দ্বিতীয় গোলে সহজ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশৈংকল থেকে উঠে আসা উঠতি ফরোয়ার্ড সাগরিকা শোনালেন নানা বাধা পেরিয়ে নিজের উঠে আসার গল্প। শুরুতে ম্যাচ নিয়ে সাগরিকা বলেছেন, ‘প্রথমে ভয় লাগছিল। ওরা (নেপাল) কীভাবে খেলে সেটা তো আগে দেখিনি। পরে খেলতে খেলতে বুঝতে পেরেছি যে আমরাও পারবো। কেন পারবো না? তারপর আমাদের খেলা ভালো হয়েছে। অনেক ভালো লেগেছে যে, আমি দুটা গোল করেছি। পরের ম্যাচে আরও বেশি গোল করার চেষ্টা করবো।’

নিজের উঠে আসার গল্প শোনাতে গিয়ে ১০ নম্বর জার্সিধারী ফুটবলার বলেছেন, ‘‘আমার বাড়ি ঠাকুরগাঁ, রানীশৈংকল; সেখান থেকে এসেছি। প্রথমে বাবা-মা আমাকে খেলতে দিতে চায়নি। কিন্তু আমার এক খালা ছিলেন, তিনি বলেছিলেন, ‘তোরা যদি মেয়েকে খেলতে দিতে না চাস, তাহলে আমাকে দিয়ে দে। আমি নিজের মেয়ে বলে ওকে ফুটবলে দিয়ে দেবো।’ আমিও বলেছিলাম, ফুটবলে যাবো, কিন্তু বাবা-মা নিষেধ করেছিলেন। গ্রামের মানুষও বলেছে, মেয়েকে ফুটবলে দেবে। কিন্তু আমি জেদ নিয়ে খেলছিলাম, একদিন না একদিন আমি স্বপ্ন পূরণ করবোই। বাবা-মার যে ভুল ধারণা, তা আমি বড় ফুটবলার হয়ে দেখাবোই। এখন জাতীয় দলের হয়ে (বয়সভিত্তিক দলে) খেলছি, আমি খুব খুশি।’

সাগরিকা চাইছেন পরের ম্যাচগুলোতেও আলো ছড়াতে। ম্যাচশেষে তার হাস্যোজ্বল চেহারাই বলে দিচ্ছিল আত্মবিশ্বাস নিয়ে সেটি করতে মুখিয়ে আছেন তিনি।