ভারতীয় মজদুরের ছেলে ব্রিটেনে করছেন যুগান্তকারী ক্যানসার টিকার ট্রায়াল, অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন টনি ধিলন

উন্নত জীবন ও জীবিকার আশায় জলন্ধর ছেড়ে ব্রিটেনে এসেছিলেন দাদু। উঠেছিলেন সাউথহলে। কাজ করেছিলেন ব্রাইলক্রিম ফ্যাক্টরিতে। বাবা-মাও সারা জীবন কর্মরত ছিলেন কারখানায়। তাদের ছেলে আজ অন্ত্র ক্যানসারের নির্মূলের পথে বড় অবদান রাখলেন।  ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানী ও ডাক্তারদের যৌথ উদ্যোগে বিশ্বে প্রথম অন্ত্র ক্যানসারের প্রতিষেধকের ট্রায়ালে প্রধান ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ডাক্তার টনি ধিলন। 

রয়্যাল সারে এনএইচএস হাসপাতাল ট্রাস্টের মেডিকেল অনকোলজিস্ট পরামর্শক ডাঃ টনি ধিলন যিনি অস্ট্রেলিয়ান অধ্যাপক টিম প্রাইসের সাথে এই ভ্যাকসিনের উন্নতিসাধনে কাজ করেছেন। রয়্যাল সারে ও ক্যুইন এলিজাবেথ হসপিটালের সহযোগিতায় সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রতিষেধক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য পাঠাবে বলে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানসার গবেষণা বিভাগ জানিয়েছে।

ডাঃ ধিলন জানিয়েছেন, ‘এটি প্রথম গ্যাসট্রোইনটেসটিনাল ক্যানসারের প্রতিষেধক। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী এটি পরীক্ষায় সফল হবে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রচুর রোগীদের এই প্রতিষেধকের দ্বারা নিরাময় করা সম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা যুগান্তকারী। এই ভ্যাকসিন ক্যানসার রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াতে সাহায্য করবে। এরপর হয়তো রোগীদের অপারেশনের প্রয়োজন আর হবে না, ভ্যাকসিনেশনের ফলেই নিরাময় হবে।’ ইউসিএল থেকে মেডিক্যালে প্রাথমিক হাতেখড়ি টনির। তারপর পিএইচডি লন্ডনের ইমপ্যারিয়ল কলেজ থেকে। পোস্টডক্টরেট করেছেন অক্সফোর্ড থেকে। এবার তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। 

রোগীদের তালিকাভুক্ত করার জন্য ইতিমধ্যেই দশটি সাইট খোলা হয়েছে, তার মধ্যে ৬ টি অস্ট্রেলিয়া ও ৪ টি ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য। ক্লিনিকাল ট্রায়ােলের জন্য আঠারো মাস ধরে ৪৪ জনকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা হবে। রোগীর শরীর যাতে ক্যানসারকে পাল্টা আক্রমণ করতে পারে এবং বিনাশ করতে পারে সেজন্য সার্জারির পূর্বে এই প্রতিষেধকের তিন ডোজ ব্যবহার করা হবে। রোগীদের প্রতিরোধ ক্ষমতাও সাথে মানিয়ে নেবে বলেই কতৃপক্ষ আশা প্রকাশ করেছে।

ক্যানসারের মধ্যে অন্ত্রের ক্যানসার যা কোলোরেক্টাল ক্যানসার নামেও পরিচিত, এই পৃথিবীতে ১.২ মিলিয়ন রোগীদের ৫০ শতাংশ। ইমিউজিন লিমিটেড নামে একটি ক্লিনিক্যাল স্টেজ ইমিউনো অনকোলজি কোম্পানি এই প্রতিষেধক ডিজাইন করেছে।

আগামীতে কি হবে, সেটা সময়ই বলবে, কিন্তু আপাতত টনি ধিলন এই বিষয়টি নিয়েই খুশি যে একজন মজদুরের ছেলে এত বড় একটা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যু্ক্ত হতে পেরেছেন। ব্রিটেনে মেধার কতটা কদর এই ঘটনা সেটাই দর্শায় বলে তাঁর অভিমত।