টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে টানাটানি, মমতার বাংলা জিআই ট্যাগ পেতেই প্রতিবাদ হাসিনার বাংলাদেশ‌

টাঙ্গাইল শাড়ির ‘মালিকানা’ কার?‌ এই প্রশ্নে কয়েকদিন আগে বিস্তর চাপানউতোর চলছিল ভারত–বাংলাদেশের মধ্যে। এবার সেটা চরমে উঠল। কারণ টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব পেতে আবেদন করেছে বাংলাদেশের প্রশাসন। এই নিয়ে বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রকের অধীন পেটেন্ট, শিল্প–নকশা এবং ট্রেড মার্কস অধিদফতরের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের মাধ্যমে এমন আবেদন করেছেন টাঙ্গাইলের জেলাশাসক কায়ছারুল ইসলাম। শাড়ির ‘মেধাস্বত্ব’ নিয়ে এখন দড়ি টানাটানি তুঙ্গে উঠেছে। এবার সেই ‘মেধা’ কোন দেশের সেটা নিয়েই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ল এপার–ওপার বাংলা।

এদিকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ট্যাগের জন্য আবেদন করে বাংলার হস্তশিল্প বিভাগ। এই বিশেষ সুতোয় বোনা তাঁতের শাড়ি নদিয়া এবং পূর্ব বর্ধমানের পণ্য হিসেবে দাবি করা হয় আবেদন। ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি জেনিভার ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (উইপো) সেই দাবিকে মান্যতা দেয়। ব্যস, তখনই টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন (‌জিআই)‌ পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করে। সমস্যা শুরু হয় সেখান থেকেই। বাংলাদেশ এবার টাঙ্গাইল শাড়ির ‘পেটেন্ট’ পেতে জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।

অন্যদিকে টাঙ্গাইলের জেলাশাসক পাল্টা জানান, টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবার জন্য গত তিন মাস ধরে ডকুমেন্টেশন তৈরির কাজ করছিলেন তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‌এই শাড়ির ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত মানুষের জীবন–জীবিকার তথ্য নিয়ে সেই কাজ করা হয়েছে। গত ২৫০ বছরের ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহ করে নথি প্রস্তুত করার পরে জিআই পাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত টাঙ্গাইল শাড়ি নামে জিআই স্বীকৃতি পাব।’‌ বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে যাঁদের হাত ধরে এই শাড়ি প্রকাশ্যে এসেছিল তাঁরা প্রায় সকলেই বসাক সম্প্রদায়ের। দেশভাগের জেরে তাঁদের অধিকাংশই আসেন পশ্চিমবঙ্গে। বসবাস শুরু করেন নদিয়ার ফুলিয়ায়, পূর্ব বর্ধমানের ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়ে। এই জায়গাগুলিই হয়ে ওঠে টাঙ্গাইল শাড়ির কেন্দ্র।

আরও পড়ুন:‌ আবার বড় নিয়োগ হতে চলেছে বাংলায়, ফরেস্ট ভলান্টিয়ারের পদে বিপুল পরিমাণ চাকরি

এছাড়া টাঙ্গাইলের জিআই ট্যাগ পেতেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় তাঁতিদের শুভেচ্ছাবার্তা ও অভিনন্দন জানান। সেটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তেড়েফুঁড়ে ওঠে বাংলাদেশ প্রশাসন। টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানান নাগরিকরা। টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ট্যাগ পশ্চিমবঙ্গ পাওয়ায় এক্স হ্যান্ডেলে প্রতিবাদ জানান সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন। টাঙ্গাইলের প্রত্যেকটি শাড়ি ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে দক্ষ কারুকাজের নিদর্শন বলেও জানান আধিকারিকরা। ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন–এর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। এই বিষয়ে বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী আবদুস সৈয়দ বলেছেন, ‘‌ঐতিহ্যবাহী এই শাড়ি টাঙ্গাইল জেলায় তৈরি হয়। এই জেলার নামেই শাড়ির নামকরণ করা হয়েছে। টাঙ্গাইল শাড়ির ইন্টাল্যাকচুয়াল প্রপার্টি রাইটসের বিষয়ে শিল্প মন্ত্রক আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’‌