ব্রেন টিউবারকিউলোসিসে চুল নেই, ছাত্রীর পাশে দাঁড়াতে স্কুল কেশহীন সরস্বতীর পুজো করল

স্কুলে সরস্বতীর মূর্তিতে পুজো হচ্ছে। তবে সেই মূর্তিতে চুল নেই। আর এই চুল ছাড়া সরস্বতী মূর্তির আবরণ উন্মোচন করল স্কুলেরই দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী শ্বেতা মিশ্র। তার মাথার চুলও খুব ছোট। তবে মূর্তি ও ছাত্রীর মধ্যে মিল খুঁজে পেয়েছেন বেলগাছিয়া মনোহর অ্যাকাডেমির শিক্ষক–শিক্ষিকারা। তাই সরস্বতী পুজোয় স্কুলের ওই ছাত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁরা জানান, তাঁদের স্কুলের সরস্বতী হল শ্বেতাই। আসলে এটার পিছনে একটা ঘটনা আছে। ব্রেন টিউবারকিউলোসিসের মতো কঠিন রোগে আক্রান্ত ওই ছাত্রী। তা নিয়েই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সে। এবার শ্বেতা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। ওষুধের প্রভাবে তার চুল ঝরে গিয়েছে। তবে শ্বেতার যাতে সঙ্কোচ না হয় তাই তার পাশে দাঁড়াতে স্কুলের সরস্বতী প্রতিমাও এবার কেশমুক্ত মূর্তি।

এদিকে এই সরস্বতী মূর্তিটি তৈরি করেছে ওই স্কুলেরই নবম শ্রেণির ছাত্র আয়ুষকুমার খটিক। সেই মূর্তিটি কাপড়ে ঢাকা ছিল। সরস্বতী পুজোর দিন শ্বেতা সেই মূর্তির আবরণ উন্মোচন করতেই স্কুলের পড়ুয়া থেকে শিক্ষক–শিক্ষিকারা হাততালি দিয়ে উঠলেন। স্কুলের শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত বলেন, ‘আমি কয়েকদিন আগে শ্বেতাকে ফোন করেছিলাম। এবার সরস্বতী পুজোর দিন আমাদের স্কুলের পত্রিকার উদ্বোধন হবে বলেছিলাম। ওকে আসতেও বলি। ও তখনই বলেছিল, দিদি, আমি কেমন করে আসব? আমার মাথার চুল নেই। ওষুধের জন্য ঝরে গিয়েছে। এটা শুনে খুব কষ্ট হয়েছিল। তখনই ঠিক করি এবার আমাদের স্কুলের সরস্বতীকে কেশহীন করে সরস্বতী পুজো করব।’

অন্যদিকে এই পরিস্থিতি দেখে এবং স্কুলের সহযোগিতা পেয়ে শ্বেতাকে আত্মবিশ্বাসী দেখা গেল। আর মূর্তি উদ্বোধন করে শ্বেতা বলে, ‘‌হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। তার পরই মাথার চুল উঠে গিয়েছিল। এখন তো আবার গজিয়েছে। তবে ছোট। আর কিছু দিন ওষুধ খেলেই ভাল হয়ে যাব। শুক্রবার থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। টানা বেশিক্ষণ পড়তে পারি না। মাথা ব্যথা করে। একটু পড়ে বিশ্রাম নিয়ে আবার পড়ি। মা সব সময়ে পাশে থাকে।’ মেয়ের সঙ্গে স্কুলে এসেছিলেন শ্বেতার মা আশা মিশ্র। তিনি জানান, একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় মেয়ের অসুখ ধরা পড়ে। আরজি কর হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।

আরও পড়ুন:‌ সন্দেশখালিতে পাট্টার জমি রেকর্ড হবে, দুটি তদন্ত কমিটি গড়ল তৃণমূল কংগ্রেস

এছাড়া শ্বেতার বাবা গাড়ি চালানোর কাজ করেন। মা আশা দেবী পরিচারিকার কাজ করেন। একটি ছেলেও রয়েছে তাঁদের ২৫ বছরের। এই রোজগারে শ্বেতার চিকিৎসার খরচ চালানো খুব কঠিন। মা আশা দেবী বলেন, ‘মেয়ের তো পড়াশোনা করে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন আছে। তাই লড়াই জারি আছে।’‌ তবে স্কুল যে এভাবে পাশে দাঁড়াবে শ্বেতার তা ছাত্রী শ্বেতা থেকে তার পরিবার ভাবতে পারেনি। আর এভাবেই সংকোচ কেটে গিয়ে আনন্দে মাতল ছাত্রী শ্বেতা।