সন্দেশখালির ‘সমস্যার মূল’ হিসেবে শেখ শাহজাহানকে চিহ্নিত করল কলকাতা হাই কোর্ট। শাহজাহানকে এখনও ধরতে না পারায় আজ রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করেন উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। শাহজাহানকে নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মনে হচ্ছে, হয় রাজ্য পুলিশ তাঁকে রক্ষা করছে। না হলে শাহজাহান পুলিশের আওতার বাইরে চলে গিয়েছেন।’ উল্লেখ্য, সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে এক সপ্তাহ আগেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়। সেই মামলাটি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে পাঠানো হয়। সেই শুনানি চলাকালীন শাহজাহানকে নিয়ে জাস্টিস শিবজ্ঞানম বলেন, ‘তিনি কি না জনপ্রতিনিধি? মানুষ তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করেছেন। যেখানে জনগণের স্বার্থে ওই ব্যক্তির কাজ করা উচিত, সেখানে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, তিনি জনগণের ক্ষতিই করেছেন।’ উল্লেখ্য, বিগত ৫ জানুয়ারি থেকে শাহজাহানের খোঁজ চলছে। তবে তিনি আজও অধরা। (আরও পড়ুন: সন্দেশখালির ‘নির্যাতিতাদের’ সঙ্গে দেখা করতে পারেন মোদী, ইঙ্গিত শুভেন্দুর)
আরও পড়ুন: অনুমতি আদালতের, প্রথমে বাধা দিয়েও শুভেন্দু-শঙ্করকে সঙ্গে নিয়ে সন্দেশখালিতে পুলিশ
গত ৫ জানুয়ারি কী ঘটেছিল? সেদিন সকালে ইডির আধিকারিকরা যখন শাহজাহানের বাড়িতে পৌঁছন, তখন দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। শেখ শাহজাহানের দেখা মেলেনি। ইডির অফিসাররা ও সিআরপিএফ-এর জওয়ানরা বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দরজা খুলতে বলেছিলেন। কিন্তু এসবের মধ্যেই মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে এক দল উন্মত্ত জনতা লাঠি নিয়ে এসে ইডি আধিকারিকদের ঘিরে ফেলেন। ইডির দাবি, প্রায় ৮০০-১০০০ জনের উন্মত্ত জনতা চড়াও হয়েছিল তদন্তকারী দলের উপর। আক্রান্ত হয়েছেন ইডির অফিসাররা। ইডির তিন জন অফিসার হাসপাতালে ভরতি। এদিকে হামলার দায় পালটা ইডির উপরেই চাপিয়েছে বাংলার শাসক শিবির। তৃণমূলের মুখপাত্র থেকে শুরু করে রাজ্যের মন্ত্রীদের দাবি, অভিযানের ব্যাপারে ইডি আগাম কোনও তথ্য দেয়নি। তথ্য দিলে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা থাকত। আর তাতে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হত না।
এদিকে সেই ঘটনায় ইডির বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করে ন্যাজাট থানার পুলিশ। শাহজাহানের বাড়ির কেয়ারটেকারের অভিযোগের ভিত্তিতেই সেই অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। অভিযোগ ছিল, ওয়ারেন্ট ছাড়াই শেখ শাহজাহানের বাড়ির তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন ইডি আধিকারিকরা। পরে সেই এফআইআর-এর ওপরে স্থগিতাদেশ দেয় হাই কোর্ট। এদিকে ইডির অভিযোগের প্রেক্ষিতেও পৃথক এফআইআর হয় শাহজাহান ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও শাহজাহান অধরা। এদিকে শাহজাহানের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা উত্তম সর্দার এবং শিবু হাজরার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় মানুষজন। অনেকেই তাদের থেকে টাকা পান বলে অভিযোগ ওঠে। এদিকে যৌন হেনস্থার অভিযোগও ওঠে। এই আবহে এখন রাজ্য রাজনীতির সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় সন্দেশখালি।