কামরুল হাসান রকির স্বপ্ন ছিল চাকরির পাশাপাশি নিজের লেখাপড়া চালানোর যাওয়ার। আলিম পাস করার পর ঢাকায় গিয়ে যোগ দেন চাকরিতে। একইসঙ্গে ফাজিল (বিএ) শ্রেণিতে পড়ার জন্য ফরম ফিলআপও করেছেন। কিন্তু রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডের ভবনে লাগা আগুনে পুড়ে গেছে সেই স্বপ্ন, শেষ হয়ে গেছে পরিবারের আশা ভরসা।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ আগুনে মারা যাওয়া ৪৫ জনের একজন কামরুল হাসান হাবিব রকির (২১)। তিনি যশোর সদরের আরবপুর ইউনিয়নের ধোপাখোলা কারিকরপাড়ার কবির হোসেনের ছেলে।
২০২৩ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গাজীর দরগাহ কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি) পাস করেন। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর তিনি ঢাকায় যান এবং বেইলি রোডে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে হিসাবরক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
নিহতের স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে আগুন লাগার পরপরই রকি তার মায়ের মোবাইলে কল করেছিলেন। কথা বলার একপর্যায়ে মাকে বলেন, আমি বোধ হয় এখান থেকে বেরোতে পারবো না। এরপর কল কেটে যায়। পরে তারা জানতে পারেন মারা গেছে।
ধোপাখোলা গ্রামের মসজিদের ইমাম আব্দুল হালিম বলেন, ঢাকা একটা অভিশপ্ত শহর। প্রায়ই শুনি, আগুন লাগে এবং অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ নানা স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় যায় আর লাশ হয়ে বাড়ি ফেরে। আমাদের রকিও তেমন একজন। এত আধুনিক ব্যবস্থা থাকতেও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নেভাতে পারলো না!
নিহত রকির দাদা হাসেম আলী বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমাদের রকি ঢাকা গিয়েছিল। এক আগুনে তার নিজের স্বপ্ন আর পরিবারের স্বপ্ন নিঃশেষ হয়ে গেলো মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে জল জ্যান্ত তরতাজা একটা প্রাণ আজ লাশ হয়ে ফিরে এসেছে আমাদের কাছে।
নিহতের প্রতিবেশীরা জানান, রকি খুবই ভালো মনের একটা ছেলে। তারা তিন ভাই। সে বড়, মেজো জন নতুনহাট পাবলিক কলেজে পড়াশোনা করছে, ছোট জনের বয়স পাঁচ বছর- সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার বাবা যশোর শহরে ইজিবাইক চালান।
যশোর সদরের আরবপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে গতকাল রাত ১২টার দিকে ঢাকায় রওনা দিয়েছি। শুনেছি, আগুনে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের দুই জন মারা গেছেন। এর মধ্যে কালকিনি উপজেলার একজন আর যশোরে আমাদের রকি। আজ ভোর ৬টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে রওনা দিই। বেলা ১১টার দিকে যশোরে পৌঁছেছি।
নিহতের স্বজনরা জানান, আজ বাদ জুমা তার জানাজার শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।