আইসিডিএস সুপারভাইজার পদে নিয়োগে কাটল জট, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে হবে বিপুল চাকরি

কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে ২৬ বছর পর আইসিডিএস সুপারভাইজার নিয়োগের জট কেটে গেল। এখন শুধু ৪০৯ জন কর্মী সুপারভাইজার পদে নিয়োগ করে থেমে গেলে চলবে না। বরং মোট ১৭২৯ জনকে নিয়োগ করতে হবে। রাজ্য সরকার এই নিয়োগ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্যে আইসিডিএস সুপারভাইজার পদে ১৯৯৮ সালে শেষ নিয়োগ হয়েছিল। তখন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারে ছিল না। ২০১১ সালে রাজ্যের ক্ষমতায় আসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তারপর ২০১৯ সালে পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এদিকে তখন ৩৪৫৮টি আইসিডিএস সুপারভাইজার শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়, মোট শূন্যপদের ৫০ শতাংশ অঙ্গনওয়ারির কর্মী থেকেই পদোন্নতির ভিত্তিতে আইসিডিএস নিয়োগ করতে হবে। তখন রাজ্য সরকার অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের জন্য ৪২২টি শূন্যপদ রেখে বাকি ৩০৩৬ শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে বলে অভিযোগ। রাজ্য সরকারের এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি তখন চ্যালেঞ্জ করে কিছু অঙ্গনওয়ারি কর্মী কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তাই নিয়ে মামলা চলছিল। তারিখের পর তারিখ পড়লেও সমাধান হচ্ছিল না।

আরও পড়ুন: রাজ্যের মন্ত্রী–বিধায়কদের সুখবর, মে মাসেই মিলবে বর্ধিত হারে বেতন, বকেয়াও আসবে

অন্যদিকে বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৩ সালে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন ৫০ শতাংশ শূন্যপদে অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের থেকেই পদোন্নতির ভিত্তিতে নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ অমান্য করে বলে অভিযোগ। আর নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রেখে দেয়। অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের পদোন্নতির মাধ্যমে সুপারভাইজার পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হয়। ১১৫২ জনের একটি মেধাতালিকাও প্রকাশিত হয়। যারা পরে মৌখিক পরীক্ষায় বসতে পারবে। প্যানেল প্রকাশ না করেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু রাখে রাজ্য সরকার বলে অভিযোগ। তাই মেধা তালিকাভুক্ত ২০০ অঙ্গনওয়ারির কর্মী আবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। শুরু হয় শুনানি।

এরপর ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ সালে বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার। তবে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেয়নি ডিভিশন বেঞ্চ। ৩০ জন মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবী বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ৫০ শতাংশ অঙ্গনওয়ারির সুপারভাইজার শূন্যপদে অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের মধ্যে থেকেই নিতে হবে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য তা মানছে না। তখন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নির্দেশ দেন, বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ নেই। তাই রাজ্য সরকার ও পিএসসি’‌কে ৫০ শতাংশ সুপারভাইজার শূন্যপদে অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের মধ্যে থেকেই নিতে হবে। ৩৪৫৮ শূন্যপদের মধ্যে ১৭২৯ জনকে অঙ্গনওয়ারির কর্মীদের মধ্য থেকেই নিয়োগ করতে হবে। আর ৪০৯ জনের পদোন্নতি নিয়োগের জন্য যে প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে সেটার নিয়োগ রাজ্য সরকার চালাতে পারবে। বাকি শূন্যপদে ১১৫২ জনের মেধাতালিকা থেকেই নিয়োগ করতে হবে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন। তাই রাজ্য সরকারকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেন বিচারপতি।