গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশের ৫৪তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন আয়োজিত এক কূটনৈতিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ শান্তিপূর্ণ ও সংঘাতমুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে গাজা ও ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের দ্রুত অবসান ঘটাতে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে কাজ করার গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

গাজা এবং ইউক্রেনসহ বিশ্বব্যাপী সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের প্রয়োজনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করার এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ ও নিরীহ মানুষ হত্যা বন্ধ করা জরুরি।’

শুক্রবার (৩ মে) ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এলাকায় অবস্থিত কুইন এলিজাবেথ সেন্টারের ঐতিহাসিক চার্চিল হলে এ অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের স্পিকার স্যার লিন্ডসে হোয়েল প্রধান অতিথি এবং হাউজ অব কমন্সের লিডার পেনি মর্ডান্ট এমপি, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও জাতিসংঘ বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড তারিক আহমাদ, শ্যাডো সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ক্লাইমেট, ফুড ও রুরাল অ্যাফেয়ার্স স্টিভ রিড এবং বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের চেয়ারম্যান রুশনারা আলী এমপি বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফসহ যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, ব্রিটিশ সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা, ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার, রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, কমনওয়েলথ ও ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) সিনিয়র প্রতিনিধি, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, মিডিয়া, অ্যাকাডেমিয়া এবং যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তার বক্তব্যে জাতির পিতা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সমর্থনের জন্য যুক্তরাজ্য সরকার, সে দেশের নাগরিক এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়ায় ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্যার এডওয়ার্ড হিথ এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর গভীর শোক প্রকাশ করায় সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার হ্যারল্ড উইলসনকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি যুক্তরাজ্যকে বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে অভিহিত করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনে যুক্তরাজ্যের সহায়তার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া অভিনন্দন বার্তায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত অংশীদারত্ব বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসামান্য প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বের নজর এখন ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হতে চলা আমাদের দেশের দিকে। তিনি ‘বঙ্গবন্ধু-এডওয়ার্ড হিথ ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড এবং ‘বঙ্গবন্ধু-হ্যারল্ড উইলসন ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড’ চালু করার জন্য যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের প্রশংসা করেন।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের স্পিকার স্যার লিন্ডসে হোয়েল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের অবদানের কথা স্মরণ করেন।

হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম জাতির পিতা ও একাত্তরের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবায়নে যুক্তরাজ্য আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।