বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বশাসন বনাম সরকারের নির্দেশিকা নিয়ে জট, গুঞ্জন শুরু সর্বত্র

একের পর এক মামলা চলছে। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নানা বিষয় নিয়ে আইনি লড়াই চলছে আদালতে। এই মামলার খরচ কীভাবে করা হবে সেটা নিয়ে এবার কার্যত নির্দেশিকা জারি করেছে উচ্চশিক্ষা দফতর। ওই নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনও মামলা লড়ার ক্ষেত্রে সরকারি আইনজীবী প্যানেল থেকে যেন নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ‘স্বশাসন’ আইনে স্বীকৃত। তারপর এমন নির্দেশিকা জারি হওয়ায় শুরু হয়েছে বিতর্ক। কারণ এমনটা রাজ্য সরকার করতে পারে কিনা তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।

ঠিক কী আছে নির্দেশিকায়?‌ ওই নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার যে টাকা বরাদ্দ করে তার মধ্যে থেকেই চালাতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি খরচ। এই খরচ থেকে ব্যক্তিগত মামলায় খরচ করা যাবে না। রাজ্য সরকারি প্যানেল থেকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আইনজীবী নিয়োগ করে। এই নির্দেশিকার নেপথ্যে নবান্ন বনাম রাজভবনের ‘সংঘাত’ দেখছে শিক্ষকমহল। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষকের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য বনাম রাজ্যপাল মামলায় রাজ্যপালের পক্ষে খরচ বহন করতে হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে। কারণ টাকা দিতে বলেছিল রাজভবন। তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় এই আইনি খরচ দিয়েছে। আর তাই চার সদস্যের দু’টি তদন্ত কমিটি গড়ে উচ্চশিক্ষা দফতর।

আরও পড়ুন:‌ আরিবাকে খুন করে অনুতপ্ত নয় শাকিব, পুলিশের জেরায় নতুন তথ্য উঠে এসেছে

সরকার এমন নির্দেশিকা দিতে পারে?‌ এদিকে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনেকেই এই নির্দেশিকাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে সরাসরি ‘হস্তক্ষেপ’ বলে মনে করছেন। তবে এই বিষয়ে আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত বলেন, ‘‌সরকার টাকা দিচ্ছে। তাই আইনজীবী সরকারি প্যানেল থেকে নেওয়ার অনুরোধ করতেই পারে। তবে এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনের বিষয়টিও আছে। টাকা দিচ্ছে বলেই সরকার হস্তক্ষেপ করবে, এমন পদক্ষেপ নৈতিক কি না সেটা দেখা জরুরি।’‌ বিজেপির আইনজীবী তথা নেত্রী সুস্মিতা সাহা দত্ত বলছেন, ‘‌রাজ্য সরকার টাকা দিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’‌ তবে সরকারি আইনজীবীদের পরামর্শ নিলে বা নিয়োগ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি পদক্ষেপের নিয়ন্ত্রণ রাজ্য সরকারের হাতে থাকবে।

আর কী জানা যাচ্ছে?‌ স্বশাসনে হস্তক্ষেপ নিয়ে নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। একাধিক শিক্ষক–শিক্ষিকা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলায় কোন আইনজীবীকে নিয়োগ করা হবে সেই সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে থাকা উচিত। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হয়ে বহু মামলায় লড়ছেন আইনজীবীরা। তাঁদের পারিশ্রমিক তুলনায় অনেকটা কম। রাজ্য সরকারি প্যানেলের আইনজীবী নিয়োগ করলে সেই খরচ বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। আবার এই নির্দেশে সরকারি প্যানেলভুক্ত শাসকদলের ঘনিষ্ঠ আইনজীবীদের মামলা বৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া বলে মনে হচ্ছে। তবে এই নির্দেশিকা কতটা পালন করা হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।