পাকিস্তান চুড়ি না পরলে তাদের চুড়ি পরিয়ে দেব: মোদি

পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়া নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্যকে ঘিরে শুরু হয়েছে দুই দেশের কথার লড়াই। জম্মু ও কাশ্মীরের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘এমন করলে পাকিস্তান তো চুড়ি পরে বসে থাকবে না।’ এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘পাকিস্তান চুড়ি না পরলে তাদের চুড়ি পরিয়ে দেব।’

সোমবার বিহারের মোজাফ্ফরপুরে এক রাজনৈতিক সভায় এমন প্রতিক্রিয়াই দেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা নরেন্দ্র মোদি। এ সময় বিজেপিবিরোধী ইন্ডিয়া জোটের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই জোটের নেতারা কাপুরুষ। তারা পাকিস্তানের পরমাণু শক্তিকে ভয় পায়। 

এসময় ইন্ডিয়া জোটের নেতা জম্মু ও কাশ্মীরের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ফারুক আবদুল্লাহর এক বক্তব্যের সমালোচনা করেন মোদি। তবে, সরাসরি ফারুক আবদুল্লাহর নাম নেননি। মোদি বলেন, ‘ইন্ডিয়া জোটের নেতারা বোধ হয় পাকিস্তানভীতিতে আছেন। তারা পরমাণু শক্তির দুঃস্বপ্ন দেখছেন।’  

চলতি মাসের প্রথম দিকে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর নিতে হলে তো ভারতের দখল করার কোনো প্রয়োজন নেই। সেখানকার মানুষই চাইছেন ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে। 

এ ব্যাপারে কয়েকদিন পর শ্রীনগরে এক প্রোগ্রাম শেষে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুক আবদুল্লাহর কাছে জানতে চাওয়া হয়। তিনি তখন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী যদি এমন বলে থাকেন, তাহলে এগিয়ে যান। আমরা আপনাদের থামানোর কে? কিন্তু মনে রাখবেন, তারা (পাকিস্তান) কিন্তু চুড়ি পরে বসে থাকবে না। তাদের কাছে অ্যাটম বোমা রয়েছে, তারা আমাদের ওপর অ্যাটম বোমা ফেলবে।’

এবার নরেন্দ্র মোদি বললেন, ‘পাকিস্তান যদি চুড়ি না পরে থাকে, তাহলে আমরা তাদের চুড়ি পরিয়ে দেব। আমি জানি তাদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার নেই। এখন তো দেখছি তাদের কাছে পর্যাপ্ত চুড়িও নেই।’  

বিহারের মোজাফ্ফরপুরে রাজনৈতিক সভায় মোদি আরও বলেন, ‘আমাদের ভালো করে বিরোধী নেতাদের দিকে নজর দিতে হবে। তারা আসলে কাপুরুষ ও ভীতুর দল। তারা পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদকে স্বীকৃতি দেয় এবং হামলার আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেয়। তাদের বাম মিত্ররাও চায় আমাদের পরমাণু অস্ত্রের ভাণ্ডার যাতে ধ্বংস হয়ে যায়।’

এর আগে বেশ কয়েকবার কাশ্মীর ইস্যুতে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। গত মার্চে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টিভির প্রোগ্রাম ‘আপ কি আদালতে’ তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের (পিওকে) মানুষ ভারতের অংশ হতে চাইছে। আমরাও এ ব্যাপারে আশাবাদী যে, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে।’  

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তখন বলেছিলেন, ‘আমি দেড় বছর আগেই বলেছিলাম, ওই কাশ্মীরে আমাদের হামলা না করলেও চলবে। সেখানে পরিস্থিতি এখন এমন হয়েছে যে, মানুষ ভারতের অংশ হতে চাইছে।’ 

এ ব্যাপারে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা, জানতে চাইলে রাজনাথ বলেন, ‘আমি আর কিছুই বলবো না। আমার বলা উচিতও না। আমরা কোনো দেশে হামলা করছি না। বিশ্বের কোনো দেশে হামলা করার বৈশিষ্ট্য ভারতের নেই। এমনকি অধিকৃত কোনো এলাকাতেও আমরা হামলা করি না।’
 
দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশ পাকিস্তান ও ভারত। দুই দেশই বিতর্কিত কাশ্মীরের পুরোটা দাবি করলেও এর কিছু অংশ শাসন করে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে। এখন উভয় দেশই পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে। তাই উত্তেজনা আগের চেয়ে কম।



রার/সা.এ