ফল প্রত্যাখ্যান, ভোট পুনর্গণনার আবেদন দুই প্রার্থীর

সদ্য শেষ হওয়া ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের নির্বাচনে কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলার চেয়ারম্যান পদের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পরাজিত দুই প্রার্থী। তারা ভোট পুনর্গণনার দাবি করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। কমিশন কর্তৃক গৃহীত তাদের আবেদনের অনুলিপি এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে।

এ ছাড়াও একই দাবিতে দুই প্রার্থী জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসার বরাবরও আবেদন করেছেন। রিটার্নিং অফিসার মো. আলমগীর ওই দুই প্রার্থীর লিখিত আবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগকারী প্রার্থীদের একজন হলেন চর রাজিবপুর উপজেলার ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মো. আরিফুল কবির তালুকদার রানা। রিটার্নিং অফিসার ঘোষিত বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী বিজয়ী প্রার্থী মো. শফিউল আলমের আনারস প্রতীকের কাছে তিনি ৩৬০ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। অপর প্রার্থী রৌমারী উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী (টেলিফোন)। বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী তিনি বিজয়ী প্রার্থী মো. শহিদুল ইসলাম শালুর (কাপ-পিরিচ প্রতীক) কাছে মাত্র ২৫১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন।

চর রাজিবপুর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফুল কবির অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, তার উপজেলায় ২৭টি কেন্দ্র ছিল। ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষে কেন্দ্র থেকে এজেন্ট কর্তৃক সংগ্রহ করা ফল অনুযায়ী তিনি ৫ শতাধিক ভোটে বিজয়ী ছিলেন। সব কেন্দ্র থেকে প্রিসাইডিং অফিসাররা ফলাফল শিট সরবরাহ করলেও রহস্যজনকভাবে ১৮, ১৯ এবং ২০ নম্বর কেন্দ্র থেকে ফল ঘোষণা বিলম্বিত হচ্ছিল। পরে তিনি জানতে পারেন ওই তিন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান পদের ভোট সংখ্যা পরিবর্তন করে আনারস প্রতীককে বিজয়ী করা হয়েছে। ওই কেন্দ্রগুলোর চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যানের ভোটের সংখ্যার গরমিল রয়েছে বলেও দাবি করেছেন প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নেওয়া এই প্রার্থী। ভোট পুনর্গণনা করা হলে তার অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হবে এবং তিনি বিজয়ী হবেন বলেও দাবি তার।

বেসরকারি ফলাফলে পরাজিত এই প্রার্থী বলেন, ‘তিনটি কেন্দ্রে ভোট গণনায় শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে আমাকে পরাজিত করা হয়েছে। বিজয়ী ঘোষিত প্রার্থী সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলোর প্রিসাইডিং অফিসারদের প্রভাবিত করে ফল পাল্টে দিয়েছেন। আমি বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে তৎক্ষণাৎ কন্ট্রোল রুমে থাকা সহকারী রিটার্নিং অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের মৌখিকভাবে অভিযোগ জানাই। ভোট পুনর্গণনার দাবি করি। কিন্তু তারা আমার কোনও আপত্তি আমলে না নিয়ে একতরফা ফলাফল ঘোষণা করেন। আমি ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি। ভোট পুনর্গণনার আবেদন জানিয়ে রিটার্নিং অফিসারকে লিখিত জানিয়েছি। রবিবার নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দিয়ে ভোট পুনর্গণনার আবেদন জানিয়েছি।’ প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে যাবেন বলেও জানান তিনি।

অপর প্রার্থী রৌমারীর মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী বলেন, ‘আমার উপজেলায় ১১টি কেন্দ্রে ভোট গণনায় কারচুপি করা হয়েছে। বিষয়টি ফল ঘোষণার আগেই সহকারী রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের জানিয়েছি। কিন্তু তারা আমলে নেননি। একতরফা ফল ঘোষণা করেছে। আমি এই ফল প্রত্যাখ্যান করেছি। ভোট পুনর্গণনার দাবি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আবেদন করেছি। উচ্চ আদালতে গিয়ে ভোট পুনর্গণনার আদেশ চাইবো।’

জেলা নির্বাচন অফিসার ও প্রথম ধাপের নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. আলমগীর বলেন, ‘তাদের অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু ফল ঘোষণার পর রিটার্নিং অফিসার কিংবা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কিছু করার নেই। আমরা প্রিসাইডিং অফিসারদের দেওয়া কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ফল ঘোষণা করেছি। তাদের এখন নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে।’

প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার বলেন, ‘তাদের অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। আমরা প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করেই ফল ঘোষণা করেছি। এখন গেজেট ঘোষণার জন্য ফলাফল পাঠানো হয়েছে।’

ভোট পুনর্গণনা চেয়ে নির্বাচন কমিশনে সংক্ষুব্ধ প্রার্থীদের লিখিত অভিযোগ দেওয়া প্রসঙ্গে এই নির্বাচন অফিসার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবে সেটা কমিশন জানাবে।’