প্রথাগত গল্পই লিখেছেন অ্যালিস মানরো : হামীম কামরুল হক 

নোবেলজয়ী লেখক অ্যালিস মানরো গতকাল মঙ্গলবার কানাডার অন্টারিওর পোর্ট হোপে নিজ বাড়িতে ৯২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি ১৯৩১ সালে অন্টারিওর উইংহামে জন্মগ্রহণ করেন। তার লেখায় এই অঞ্চলের মানুষের জীবনবোধ ও সংস্কৃতি উঠে এসেছে। 

জাকিয়া খান জ্যোতি : অ্যালিস মানরোর মৃত্যুতে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

হামীম কামরুল হক :
পৃথিবীতে শুধু ছোটোগল্প লিখে বিশ্বসাহিত্যে বা বিশ্বপাঠকের কাছে প্রতিষ্ঠা খুব বেশি লেখক পাননি। যারা পেয়েছেন তাদের মধ্যে অ্যালিস মানরো অন্যতম। নানাবিধ দিক বিবেচনা করে তাকে একজন সার্থক লেখকই বলব। অ্যালিস মানরোর মৃত্যুর সংবাদ শুনে ভাবছি, তাকে আবার পড়ব।

প্রশ্ন : অ্যালিস মানরোকে কীভাবে পাঠ করা যায়? আপনার পাঠ অভিজ্ঞতা থেকে বলুন।

উত্তর : অনেকেই মনে করেন, গল্পের মৌলিক কোনো পরিবর্তন, সংযোজন বা নতুন কোনো অবদান যদি কারো থেকে থাকে তবে তা হোর্হে লুইস বোর্হেসের। অ্যালিস মানরোর গল্প তো প্রথাগত, যে গল্প আমরা পড়ে আসছি অনেকটা সেরকমেরই। তাকে পাঠ করার ক্ষেত্রে কতগুলো জিনিস মনে রাখতে হবে : তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা উন্নত একটি দেশ কানাডায়—সে দেশের মানুষজন আসলে কী রকম জীবন-যাপন করে। যদি তিনি প্রান্তিক মানুষ হন তাহলে কী রকম জীবন-যাপন করে।
একাকী, নিঃসঙ্গ জীবন-যাপনের জটিলতাগুলো অ্যালিস মানরো লিখেছেন। আসলে অ্যালিস মানরোর গল্পের মধ্যে যে খুব স্নায়ুবিক ব্যাপার আছে তা আমার মনে হয় না। 
একজনের প্রতি আরেকজনের টান, সম্পর্ক, হৃদয়ের টানাপড়েন, জটিলতার জায়গাগুলো—অ্যালিস মানরো থেকে আমরা কীভাবে উপস্থাপন করতে পারি তা শিখতে পারি বা এই জায়গাগুলো মনে রেখে তাকে পড়তে পারি।
কিন্তু সবসময়ই মনে হবে যে, অ্যালিস মানরো চেখভের উত্তরাধিকার হয়েও তার সমকালে যারা ছিলেন, যেমন তার জন্ম ১৯৩১ সালে, অর্থাৎ তার সমসাময়িক অন্যান্য লেখকদের লেখা মাথায় রেখে অ্যালিস মানরোকে পড়লে মনে হবে প্রথাগত গল্পই পড়ছি। সেই জায়গা থেকে প্রথাগত গল্পের গভীরতা, আবেদন ও সংবেদনশীল গল্পই অ্যালিস মানরো লিখেছেন।

প্রশ্ন : অ্যালিস মানরোর সাহিত্যের বিষয়-আশয় বা মৌলিকত্ব কী?

উত্তর : মৌলিকত্ব আসলে শুধু গল্প লিখে। নারী লেখক যারা আছেন আমি তাদেরকে পড়তে চাই বা পড়ার চেষ্টা করি, কারণ নারীর জগৎ, নারীর ভুবন, নারীর চিন্তাধারা পুরুষদের থেকে আলাদা হয়ে থাকে। নারীর নিজস্ব জীবন, নিজস্ব জীবনভাবনা এটা আসলে নারী ছাড়া সার্বিকভাবে একজন পুরুষ কখনোই বুঝতে পারে না। হয়ত বা ৮০ ভাগ বুঝতে পারে, ৮০ ভাগও বুঝতে পারে কি না সন্দেহ।
নারীর জীবন, জগৎ, ভাবনা, তার কল্পনা, তার আবেগ, তার সংকট, তার সম্ভাবনা এই জায়গাগুলো না পড়লে আমার মনে হয় জীবনের বড় একটা অংশকে বাদ দিয়ে দিচ্ছি। অ্যালিস মানরোকে সেই অর্থে পড়া যেই অর্থে ভার্জিনিয়া উল্ফ, সিমোন দ্য বোভোয়ার বা অন্যান্য নারী যারা লিখেছেন।
খুব বুদ্ধিবৃত্তিক বা ইনটেলেকচুয়াল জায়গা থেকে কিন্তু আমরা  অ্যালিস মানরোকে পড়তে পারি না।  অ্যালিস মানরো একেবারে জীবনের গল্প বলেন এইটা তার একটা বিশেষ ব্যাপার।

এছাড়াও আধুনিক জীবন, পৃথিবীর মানুষ, তাদের একাকিত্ব, নিঃসঙ্গতা, দূরের প্রান্তিক কেউ বা শহরের কেউ—এরকম মানুষগুলোর জীবনকে আসলে তিনি উপলব্ধি করান এবং যা বৈশ্বিক সংযোগ তৈরি করে। অ্যালিস মানরো কানাডার সাহিত্যে তো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে নারীদের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ। এখন সার্বিকভাবে ছোটোগল্পের অবদান হিসেবে তাকে দাগিয়ে দেওয়া বা তার ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আরেকটু সময় হয়ত বা লাগবে।