‘জীবনে কখনও কোনও ভোট বাদ দেইনি’

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বাঁশপুকুরিয়া এলাকার ১০৭ বছর বয়সী বৃদ্ধা রাহেলা বিবি লাঠিতে ভর করে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুর ১২টায় পুঠিয়া উপজেলার বাঁশপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ছেলের বউয়ের সহযোগিতায় ভোট দিতে আসেন তিনি। জীবনের শেষ প্রান্তে ভোট দিতে পেরে খুশি এই বৃদ্ধা। ভোট দেওয়া শেষে লাঠিতে ভর করে নিজেই বের হয়ে যান তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, জীবনে অনেকবার ভোট দিয়েছি। দীর্ঘ ১০৭ বছরে প্রতিবারই ব্যালটে সিল মেরে ভোট দিয়েছি। জীবনে কখনও কোনও ভোট বাদ দেইনি। এই বয়সে লাঠিতে ভর করে ভোট দিতে পেরে অনেক ভালো লেগেছে। নিজের ভোট নিজে দিতে পেরেছি। ভালোভাবে ভোট দিছি। জানি না মরণের আগে আর ভোট দিতে পারবো কিনা, ভালোভাবে একটা ভোট দিয়ে গেলাম।

রাহেলার বড় ছেলের বউ বলেন, ভোট দিতে আসার সময় শাশুড়ি আম্মার খুব আগ্রহ দেখলাম। তাই আমার সঙ্গে নিজেই লাঠিতে ভর করে কেন্দ্রে এসেছেন। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে খুবই আনন্দিত।

এ সময় ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে এসেছিলেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা কল্যাণ চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সর্বস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এই কেন্দ্রে মঙ্গলবার রাহেলাই সবচেয়ে বয়স্ক ভোটার। তিনি দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রে এসে ভোট দিয়েছেন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কেন্দ্রে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলছে।

অন্যদিকে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে রাজশাহীর বাগমারা, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলায় ভোটগ্রহণ চলছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। সকালে ভোট শুরুর পর ভোটারদের উপস্থিতি কম হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ছে। তবে বিভিন্ন কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এদিকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন নির্বাচন কমিশন। ভোটগ্রহণ শুরুর পর এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার দুটি কেন্দ্র ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

উপজেলার নয়াপাড়া গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থী শরীফ ও মজিদ সরদারের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গোপালপুরে কমপক্ষে ৯ জন এবং পানানগর কেন্দ্রে এক জন আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বানেশ্বর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। এ সময় তিনি ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট প্রদানে আশ্বস্ত করেন। সেখানে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নারী ও তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি বেশি ছিল।

এ সময় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। কোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ছাড়াই সকাল ৮টা থেকে দূর্গাপুর, পুঠিয়া ও বাগমারা উপজেলায় ২৬৭টি ভোট কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সকালের দিকে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে।

তিনি আরও বলেন, দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোথাও থেকে এখন পর্যন্ত বড় সহিংসতার খবর পাইনি। সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। স্বাচ্ছন্দ্যে ও উৎসবমুখোর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।

রাজশাহীর এই উপজেলায় মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১২২টি। আর ভোট কক্ষ ৭৪৭টি। মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১০ হাজার ৯৭১ জন। এই উপজেলার মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৫৮২জন ও নারী ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৫৪ হাজার ৩৮৯ জন। রাজশাহীর তিন উপজেলায় সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে এক হাজার ৫০০ জন পুলিশ সদস্য, ১০ প্লাটুন বিজিবি, তিন হাজার ৭৪০ জন আনসার সদস্য, ৩৩ জন ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাবের ছয়টি টিম দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব ও পুলিশের টহল টিম দায়িত্ব পালন করছে।