‘বাংলাদেশে মত প্রকাশের অধিকার সংকটজনক পরিস্থিতেই রয়েছে’

বিশ্বব্যাপী অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখন মত প্রকাশের স্বাধীনতার সংকটের মধ্যে জীবনযাপন করছে। ২০২৩ সালে এমন সংকটের মধ্যে থাকা মানুষের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ শতাংশে। এর অর্থ হচ্ছে বিশ্বের ৩৯টি দেশের ৪০০ কোটি মানুষ এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার সংকটের মধ্যে থাকা দেশগুলোতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে ভারত। দেশটি এক বছরের ব্যবধানে (২০২২ থেকে ২০২৩) বৈশ্বিক মত প্রকাশের এই সূচকে ‘উচ্চ বিধিনিষেধপূর্ণ’ শ্রেণি থেকে ‘সংকটজনক’ শ্রেণিতে নেমে গেছে। মত প্রকাশের সংকটজনক শ্রেণিতে অবস্থান বাংলাদেশেরও। ১২ স্কোর নিয়ে এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২৮তম। এছাড়া ২৪টি দেশ অতি বাধাগ্রস্ত শ্রেণিতে, বাধাগ্রস্ত ২৫টি, স্বল্প বাধাগ্রস্ত ৩৫টি এবং মত প্রকাশের মুক্ত শ্রেণিতে রয়েছে ৩৮টি দেশ।

মঙ্গলবার (২১ মে) গ্লোবাল এক্সপ্রেশন রিপোর্ট (বৈশ্বিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিবেদন) এ এসব কথা জানানো হয়। একযোগে বিশ্বের সবকটি দেশে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়ে। এ উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আর্টিকেল নাইনটিন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকটজনক পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রকাশিত রিপোর্টটি আমাকে অবাক করেনি। পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য নাগরিক সমাজের কথা সরকারকে কানে নিতে হবে।

দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এসব পরস্পর সম্পর্কযুক্ত, সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে আমরা সংকটজনক অবস্থায় রয়েছি। বিশেষ করে সংবাদ মাধ্যমের ক্ষেত্রে ডিজিটাল বা সাইবার সিকিউরিটি আইনের কারণে একটা ভয়ের সংস্কৃতি রয়ে গেছে। এর থেকে বের হতে না পারলে সূচকে ক্রমান্বয়ে অবনতি হতে থাকবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি। মত প্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে রাজনৈতিক প্রেক্ষিত বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই।

আর্টিকেল নাইনটিন, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম বলেন, ২৫টি সূচকের মধ্যে ৮টি ডিজিটাল অধিকার বিষয়ে। সবগুলো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের স্কোর সম্পূর্ণ ঋণাত্বক। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন দেখছি। কাজ চলছে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের। একই সময়ে নাগরিকের ডিজিটাল রাইটস খর্ব করাটা সরাসরি সাংঘর্ষিক। সরকারের সমস্ত উদ্যোগের প্রাণকেন্দ্রে থাকতে হবে নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করা।