বাড়ির লেটার বক্সে চিঠি ফেলে গৃহত্যাগ স্কুলপড়ুয়ার, কোথায় গেল?‌ খোঁজ শুরু উত্তরপাড়ায়

নিজের বাড়ির লেটার বক্সে নিজেই চিঠি ফেলল স্কুলপড়ুয়া। তারপর সে বাড়ি ত্যাগ করে চলে গেল। এই ঘটনায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায় এখন এটাই চর্চিত বিষয় হয়ে উঠেছে। ‘‌সাধু হতে যাচ্ছি’‌ বলে জানিয়ে লেটার বক্সে চিঠি ফেলে গৃহত্যাগ করল উত্তরপাড়ার স্কুল পড়ুয়া। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তবে ঘটেছে। এই ঘটনা নিয়ে থানা–পুলিশ হওয়ার পরে উত্তরপাড়া রেল স্টেশনে সিসি ক্যামেরা পরীক্ষা করে দেখা যায়, কাঁধে ঝোলা, হাতে লাঠি এবং গামছা পরা তার সাধু বেশের ছবি। ওই ছবি আদর্শ তিওয়ারির সাধু বেশের ছবি। উত্তরপাড়া পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের রাম–সীতা ঘাট রোডের বাসিন্দা আদর্শ তিওয়ারি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। মঙ্গলবার ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে। গঙ্গার স্নান করতে যাচ্ছে বলে একটা ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়।

তারপর আর ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুজি করেও উত্তরপাড়ায় তাকে আর পাওয়া যায়নি। দীর্ঘক্ষণ বাড়িতে ছেলে না ফেরায় চিন্তিত হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। আর তখন থেকেই শুরু হয় খোঁজ। তারপরই ওই বাড়িরই লেটার বক্স থেকে তার একটি চিঠি উদ্ধার হয়। সেই চিঠি থেকেই জানা যায় সাধু হওয়ার জন্য সে গৃহত্যাগ করেছে। ওই চিঠিতে স্কুলপড়ুয়া লিখে যায়, নিজের ইচ্ছায় ঘর ছেড়ে আধ্যাত্বিক পথে যাচ্ছে। আগামী ২৪ মে তার জন্মদিন। সেদিনই সে দীক্ষা নিয়ে নেবে। যাওয়ার আগে গঙ্গায় স্নান করে, ঘরেই নিজের ফোন, মানিব্যাগ, চটি ফেলে যায়। চিঠি থেকে জানা যায়, সে প্রথমে নবদ্বীপ এবং পরে বৃন্দাবন যাবে।

আরও পড়ুন:‌ গ্রেফতার বিজেপির মণ্ডল সভাপতি, লোকসভা নির্বাচনের মরশুমে খড়গপুরে আলোড়ন

এদিকে ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ তাকে উত্তরপাড়া স্টেশনে সাধুবেশে দেখা গিয়েছে বলে জানতে পারেন তার পরিবারের সদস্যরা। আদর্শ তিওয়ারির দাদু প্রেমনাথ তিওয়ারি এই ঘটনার কথা শুনে জানান, নাতিকে নিয়ে একবার মথুরা, বৃন্দাবন এবং অযোধ্যায় যান বহুদিন আগে। সেখানে প্রেমানন্দ নামে এক সাধুর আশ্রমে গিয়ে বই কেনে নাতি। যমুনা নদীতে স্নান করে তখন ওখানে থাকাকালীন মাটি নিয়ে আসে যেটা দিয়ে রোজ তিলক কাটত নাতি। আর কোরান–বাইবেল–গীতার মতো ধর্মীয় বই পড়ত সে। দাদু প্রেমনাথ তিওয়ারি বলেন, ‘‌খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছি। কোথায় গেল জানি না। পরিবারের সবাই চায় ছেলে বাড়িতে ফিরে আসুক। ওর যা ইচ্ছা সেটাই করুক। কিন্তু সেটা বাড়িতে থেকেই।’‌

অন্যদিকে এই নিয়ে পরিবারের সদস্যরা এখন উৎকণ্ঠায় কাটাচ্ছেন। তাই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। আদর্শকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে কাকুতি–মিনতি করছেন। এই অবস্থায় আদর্শের বোন অক্সিতা তিওয়ারির কথায়, ‘‌দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষার সময়ও বলেছিল আমি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাব। একবার কী স্বপ্ন দেখল জানি না, তারপরই পুজো পাঠ শুরু করে। হঠাৎ কী হল বুঝতে পারছি না।’‌ আর আদর্শের দিদিমার বক্তব্য, ‘‌বাড়িতে সবাই কান্নাকাটি করছে। রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মোবাইল, টাকা পয়সা কিছু নিয়ে যায়নি। খুব দুশ্চিন্তায় আছি আমরা।’‌