সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে দমন ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে : সেলভা আলমাদা

সেলভা আলমাদা ১৯৭৩ সালে ৫ এপ্রিল আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে কবি, ছোটগল্পকার এবং ঔপন্যাসিক। ‘Chicas muertas’ গ্রন্থের মাধ্যমে নন-ফিকশনেও তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন।
আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার ২০২৪ সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পাওয়া তার ‘নট আ রিভার’ উপন্যাসের বিষয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছে বুকার কর্তৃপক্ষ। সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন মৃত্তিকা তৃণ।

প্রশ্ন: দীর্ঘ তালিকায় স্থান পাওয়ার অনুভূতিটা কেমন? পুরস্কারপ্রাপ্তির বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: দীর্ঘতালিকায় স্থান পাওয়া আমার জন্য অনেক সম্মানের। বিশেষ করে, আমার দেশ (আর্জেন্টিনা) বর্তমানে যে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে যাচ্ছে তার প্রেক্ষিতে এই সম্মাননা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে দেশ চালাচ্ছে চরম-ডানপন্থীরা (Ultra-right-wing movement), যারা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে দমন ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে—যে ঐতিহ্যের জন্য আর্জেন্টিনা সারাবিশ্বে বিখ্যাত। চলচ্চিত্র, সাহিত্য, থিয়েটার, সঙ্গীত এবং শিল্পকলা চর্চা ও রক্ষা করে এমন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত বন্ধের হুমকিতে রয়েছে। ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে লা লিবারতাদ আভাঞ্জা (La Libertad Avanza) সরকার দায়িত্ব নিলে, আমরা সাংস্কৃতিক কর্মীরা তাদের সন্দেহের তালিকায় পড়ে যাই এবং প্রচণ্ড অবজ্ঞার স্বীকার হই। এমনকি সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সমস্ত সরকারি সমর্থন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: উপন্যাসটি লেখার পিছনের অনুপ্রেরণা হিসেবে কোন বিষয়টি কাজ করেছে? এই গল্পটাই কেনো বলতে চেয়েছেন?
উত্তর: নদীকেন্দ্রিক বা নদী থেকে যা পাওয়া যায় তার উপর নির্ভর করে জীবন-যাপন করা একজন নারী ও একজন পুরুষকে কেন্দ্র করে উপন্যাসটি রচিত। মূলত তাদের এই জীবন-যাপন ১৯৯০ সালের আর্জেন্টিনার নব্য-উদারনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রতিফলিত করে—যা আর্জেন্টিনার উল্লেখযোগ্য মানুষকে আর্থিকভাবে অসচ্ছল করে, দারিদ্র ও প্রান্তীয়করণ করা হয়েছে। ধ্বংসাত্মক আঞ্চলিক অর্থনীতি, পাবলিক সেক্টরকে ফাঁকা করে ফেলার, প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠনের সেই একই হিংস্র প্রক্রিয়া সাম্প্রতিক সময়ে আবার শুরু করেছে বর্তমান সরকার।
চার বছর আগে উপন্যাসটি লেখা শেষ করেছি—যখন ভাবনাতেও ছিল না আর্জেন্টিনা আবার ডানপন্থি দ্বারা শাসিত হতে পারে। উপন্যাসের গল্পটি লিখতে চেয়েছিলাম কারণ তা আমার নিজের গল্পেরও অংশ। আমি যেখানে বেড়ে উঠেছি সেখানের জনগণ অনেক ক্ষেত্রে নব্য উদারনীতির দ্বারা প্রান্তিক হয়ে পড়েছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল দারিদ্র্য এবং সেখানে কাজের অধিকার, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের ন্যূনতম অধিকারও ছিল না। দেশের প্রতিটি নদী, প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি বৃক্ষ এবং বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের প্রতি আমার নিবেদিত বিনম্র শ্রদ্ধা এই উপন্যাসটি।

প্রশ্ন: বইটি লিখতে কত সময় লেগেছে এবং আপনার লেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলুন?
উত্তর: ২০১৩ সালের দিকে উপন্যাসটি লিখতে শুরু করি। মনে আছে তখন আমি এক টানা প্রায় ত্রিশ পৃষ্ঠা লিখে ফেলেছিলাম। তারমধ্যে একটি নন-ফিকশন লেখা হয়। পরের বছর, আবার যখন উপন্যাসের খসড়াটি পড়ি তখন তার ‘টোন’ পছন্দ হয়নি। তাই নতুন করে আবার শুরু করার সিদ্ধান্ত নিই। আরও একটি বছর কেটে গেল, মাঝেমধ্যে লিখতাম। কিন্তু আমি তখন চরিত্রদের নিয়ে ও গল্পের দুনিয়াটি সম্পর্কে প্রতিনিয়ত ভাবতে থাকলাম। এরই মাঝে একটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছিলাম। অবশেষে, আমি ২০২০ সালের গ্রীষ্মে দুই মাস টানা লিখে উপন্যাসটি শেষ করি। অর্থাৎ প্রথম লাইন এবং চূড়ান্ত সংস্করণের মধ্যে প্রায় সাত বছর কেটে গেছে।