চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে বিশেষ ট্রেন বন্ধ করায় যাত্রীদের ক্ষোভ

যাত্রীদের কাছে ব্যাপক চাহিদা থাকার পরেও বন্ধ হয়ে গেলো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে চলাচল করা বিশেষ লোকাল ট্রেনটি। বৃহস্পতিবার (৩১ মে) থেকে এ পথে আর চলছে না এই ট্রেন। এতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে।

গত পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে বিশেষ ট্রেন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। গত ৮ এপ্রিল এই ট্রেন চলাচল শুরু হয়। চালুর পর থেকে ট্রেনটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যাত্রীদের চাপে এরপর দুই দফায় বিশেষ ট্রেনের সময় বাড়িয়ে ১০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের ১১ দিন আগেই ইঞ্জিন ও জনবল সংকট দেখিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিশেষ ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে কক্সবাজার পৌঁছাতো সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। আবার সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে চট্টগ্রাম পৌঁছাতো রাত ১০টায়। ট্রেনটি ষোলোশহর, জানালিহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলহাজারা ও রামু স্টেশনে থামতো। বিশেষ ট্রেনটির ১০টি বগিতে যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল ৪৩৮ জন।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার বিশেষ ট্রেনটি মাত্র ৫২ দিন এ রুটে চলাচল করে। এই ট্রেনে যাত্রী পরিবহন করা হয় ৫৪ হাজার ৮১৪ জন। আয় হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা, যা অন্যান্য লোকাল ট্রেনের চেয়ে বেশি।

ট্রেনটি স্থায়ী করার দাবিতে স্থানীয় লোকজন রেলমন্ত্রী, রেলওয়ের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন। স্থানীয়রা ট্রেনটি চালু রাখার আশ্বাস পেয়েছিলেন। হঠাৎ রহস্যজনকভাবে ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে, কক্সবাজার রুটে একমাত্র লোকাল ট্রেন বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে যাত্রী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চালু করা লোকাল বিশেষ ট্রেনটি বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ হয়ে গেলো। ট্রেনটি চালু রাখতে আমরা রেলমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছিলাম। স্থায়ী করার আশ্বাস পেয়েছিলাম। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে ট্রেনটি ইঞ্জিন ও জনবল সংকটের কথা বলে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে আমরা মর্মাহত হয়েছি। চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের মাঝখানে থাকা বাসিন্দারা রেল যোগাযোগ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা মো. কাউসার বলেন, ‘ট্রেনের এ রুটটি ছিল লাভজনক। শুনেছি বাস মালিকদের সুবিধা দিতে নাকি এ রেলপথে ট্রেন সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবার শুনেছি, লোকাল ট্রেনটি বন্ধ করে লাভজনক রুটটি বেসরকারি খাতে অর্থাৎ বেসরকারি ট্রেনকে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমাদের গ্রামের ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করলেও আমরা এর সুবিধা পাচ্ছি না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে যাত্রীরা যখন স্পেশাল ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন, তখন একে একে সব পরিবহনে যাত্রী-সংকট দেখা দেয়। এতে মালিকরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাত্রীপ্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া কমাতে বাধ্য হন। তারপরও যাত্রী না পাওয়ায় মালিকরা রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ফেলেছে বলে এই রুটে চলাচল করা যাত্রীদের অনেকেই মনে করেন। তাই বাস মালিকদের প্রেসক্রিপশনে কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন বন্ধ করা হচ্ছে। রেলওয়ের একশ্রেণির কর্মকর্তা সরকারের আকাঙ্ক্ষার বাইরে গিয়ে কেবল বাস মালিকদের লাভবান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই দ্রুত কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রীদের কাছে কক্সবাজার রুটের বিশেষ ট্রেনটির বেশ চাহিদা ছিল। ইঞ্জিন ও জনবল সংকটের কারণে ট্রেনটি বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে কোরবানির ঈদের আগে ট্রেনটি আবার চালুর চেষ্টা চলছে।’

উল্লেখ্য, প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়। গত বছরের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেললাইনের উদ্বোধন করেন। ওই বছরের ১ ডিসেম্বর একটি এবং চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে আরও একটিসহ ঢাকা থেকে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয়। এই দুটি ট্রেনে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে যাতায়াতের জন্য মাত্র ১১৫টি করে আসন বরাদ্দ রাখা হয়। তবে চট্টগ্রাম থেকে একটি ট্রেনও চালু করা হয়নি।