বিজেপির ব্যঙ্গ কাটিয়ে এবার উজ্জ্বল গান্ধী ভাই

বছরের পর বছর ধরে বিজেপির উপহাস আর ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপের শিকার হতে হয়েছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধিকে। কখনও পাপ্পু, কখনও শেহজাদে-এসব নামে ডেকেই রাহুলকে উপহাস করতেন নরেন্দ্র মোদিসহ বিজেপি নেতারা। গত এক দশক ধরে সবগুলো নির্বাচনে বিজেপির আক্রমণের শিকার হয়েছে গান্ধী পরিবার। কিন্তু এবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে গান্ধী পরিবার। বুথফেরত জরিপগুলোর আভাসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে গান্ধী ভাই- বোনকে। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে উঠে এসে এ তথ্য।

কার্যত ভারতুজুড়ে জোড়ো যাত্রার মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেন রাহুল গান্ধী। আর এই পথচলায় জনগণের সঙ্গে তার মিথস্ক্রিয়া তাকে শুধু টিভির পর্দাতেই নয়, মানুষের কাছাকাছিও নিয়ে এসেছিল। সেই সঙ্গে তার সম্পর্কে বিজেপি যে ধারণা মানুষের মনে গেঁথে দিয়েছিল তা পাল্টে গিয়েছিল।

ভারত তথা পুরো বিশ্ব দেখেছে, রাহুল গান্ধী সাধারণ মানুষকে জড়িয়ে ধরছেন। ছাত্র থেকে শুরি করে ট্রাকচালক-সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। রাহুল গান্ধীর এই চেহারা ভারতবাসী আগে দেখেননি।

আবার নির্বাচনের আগে অনেকেই আশা করেছিলেন, এবার অন্তত লড়বেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কিন্তু তিনি তা করেননি। আর সেটা নিয়ে বিরোধী নেতারা উপহাস করতে ছাড়েননি। তবে তাদেরকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রচারণাকেই ফোকাস করতে চান তিনি। নির্বাচনে দাঁড়ালে শুধু একটি আসনেই প্রচারণা চালাতে হতো তাকে। কিন্তু দেশব্যাপী কংগ্রেসের হয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা।  

এবার আমেথি ও রায়বেরেলি দুটি আসনেই তৎপর ছিলেন প্রিয়াঙ্কা। দুটি আসনেই এগিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। আমেথিতে গতবার রাহুল গান্ধির পরাজয়েরই যেন এবার শোধ নিলেন কংগ্রেসের কিশোরীলাল শর্মা।

২০২৪ সালের নির্বাচন প্রিয়াঙ্কাকে সুবক্তা হিসেবে তুলে ধরেছিল যেখানে শুধু ভাষণই দেননি। জনগণের সাথে সংযোগও স্থাপন করেছিলেন।

নির্বাচনী প্রচারণা মোদি যখন বলেছিলেন, কংগ্রেস ভারতের মা-বোনদের মঙ্গলসূত্র কেড়ে নিতে চায়। সেই সময় প্রিয়াঙ্কার উত্তর ছিল, ‘দেশ স্বাধীন হয়েছে ৭০ বছর ধরে। কংগ্রেস ৫৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। কেউ কি আপনাদের মঙ্গলসূত্র কেড়ে নিয়েছিল? বরং যখন যুদ্ধ চলছিল তখন ইন্দিরা গান্ধী তার গহনা তুলে দিয়েছিল দেশসেবার জন্য। আমার মা তার মঙ্গলসূত্র দেশের জন্যই উৎসর্গ করেছে’।

এভাবেই গান্ধী ভাই-বোন বিজেপির তৈরি করা কংগ্রেসের ভাবমূতি ভেঙে দিয়েছিলেন। এছাড়া কংগ্রেস এবার লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৩২৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। বাকী ২১৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা।

এনডিটিভির ফলাফল আপডেট অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত এনডিএ এগিয়ে রয়েছে ২৯৬ আসনে। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া এগিয়ে রয়েছে ২২৯ আসনে। ভোটের ফল যাই হোক না কেন, গান্ধি ভাই-বোন এবার গান্ধি পরিবার তথা নিজেদের ভাবমূর্তি সঠিকভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন-এটাই সবচেয়ে আশার কথা।