কালোটাকা অর্থনীতির কাজে ব্যবহার হয় না: এনবিআর চেয়ারম্যান

‘কালোটাকা দেশের অর্থনীতির কাজে ব্যবহৃত হয় না’ উল্লেখ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, কালোটাকা দেশের বাইরেই বেশি চলে যায় এবং তা বিভিন্ন ভোগ-বিলাসের কাজে ব্যয় হয়।’

শুক্রবার (৭ জুন) বিকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে’ তিনি এ কথা বলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কথায় কথায় বলা হয়, কালোটাকাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কালোটাকা যারা তৈরি করেন, তারা দেশের অভ্যন্তরের অর্থনীতিতে ব্যবহার করার জন্য করেন না। বাজেটে প্রস্তাব আনার পর একটা কথা আসছে যে— কালোটাকা সাদা করার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তবে আমরা এভাবে দেখছি না।’

বিভিন্ন কারণেই অপ্রদর্শিত কিছু সম্পদ থাকতে পারে বলে মনে করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান। তার কথায়, অসতর্কতার জন্য, অজ্ঞতার কারণে অথবা অন্যের মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার কারণে অনেকের সম্পদের তথ্য অপ্রদর্শিত থেকে যায়। এ ধরনের অপ্রদর্শিত অর্থ দেখানো নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন বলে দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আবেদন এসেছে। এসব ব্যবসায়ী অপ্রদর্শিত সম্পদ দেখাতে চান, তবে এসব সম্পদের উৎসের জবাব তারা দিতে পারছেন না। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল যে, সম্পদ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু জায়গায় বৈধ আয় নিয়ে ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় আছেন। এ কারণে আমরা এ প্রস্তাব দিয়েছি।’

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আরও একটি বিষয় আছে, যা আপনারা সবাই স্বীকার করবেন। সেটা হলো, জমি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে কিছু টাকা আমাদের অজ্ঞাতেই কালো হয়ে যায় বা অপ্রদর্শিত থেকে যায়। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এখান থেকে আমরা এখনও মুক্তি পাইনি। এ ধরনের কিছু অনিবার্য কারণে যারা সম্পদ দেখাতে পারেননি, সে সম্পদ দেখানোর জন্য আমরা সুযোগ দিয়েছি। পৃথিবীর অনেক দেশেই এমন সুযোগ দেওয়া হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে একাধিক সাংবাদিক জানতে চান, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মতো ব্যক্তিরা সম্পদে ১৫ শতাংশ কর দিলে তাদের আয় বা সম্পদ বৈধ হয়ে যাবে কিনা?— জবাবে আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘(বেনজীরের সম্পদের) বিষয়টি তো ফৌজদারি তথা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে কর দিলে সম্পদ কীভাবে বৈধ হবে— সেটা তো আইনি প্রশ্ন। তবে এত ঢালাওভাবে আমরা এটাকে দেখতে চাই না। বিভিন্ন কারণে মানুষের অপ্রদর্শিত কিছু সম্পদ থাকতে পারে। এ ধরনের অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধভাবে দেখানোর সুযোগ দিতে আমরা এমন প্রস্তাব দিয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরেক সাংবাদিক জানতে চান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ সরকার ও প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তারা সরকারের গোয়েন্দা চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে এমন পর্যায়ে গেলেন? এখন বেনজীরের মতো ব্যক্তিরা সম্পদে ১৫ শতাংশ কর দিলে তাদের সম্পদ বৈধ হবে কিনা।

এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান জানান, ‘বেনজীর আহমেদের বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে যে অধিকার তার (বেনজীর) পাওয়ার কথা, তাকে সেটা দেওয়া হবে।’

বেনজীর আহমেদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে জানিয়ে মসিউর রহমান বলেন, ‘আপনারা কাগজে নিশ্চয়ই দেখেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধান শেষে প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজির হতে বেনজীর আহমেদ সময় চেয়েছেন। তাকে সময় দেওয়া হয়েছে।’

মসিউর রহমান আরও বলেন, ‘এটা বলা হয়নি যে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না; আবার এটাও আগাম বলা হয়নি যে তাকে আমরা জেলে নেবো, ফাঁসি দেবো। নাগরিক হিসেবে যে অধিকার তার পাওয়ার কথা, তাকে সেটা দেওয়া হবে।’