কলকাতার গঙ্গায় কুমিরের আনাগোনা, আতঙ্কে ঘাটে নামছেন না মানুষজন, তদন্তে বন দফতর

গঙ্গার জলে কুমিরের আনাগোনা নিয়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। তাও আবার খাস কলকাতার গঙ্গায়। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অনেকে দাবি। তাই লাটে উঠেছে গঙ্গার স্নান। কলকাতা–হাওড়ার গঙ্গায় গত দু’‌দিন কুমিরের দেখা মিলেছে বলে সাধারণ মানুষের দাবি। কিন্তু সেটা কুমির না ঘড়িয়াল তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। কিন্তু সন্দেহ থাকলেও আতঙ্কের পারদ চড়চড় করে উর্দ্ধমুখী হয়েছে। এখন গঙ্গার বুকে কুমিরের আতঙ্কে ঘুম উড়ে গিয়েছে প্রশাসনের। এমনকী তিনটে আস্ত কুমির গঙ্গায় মুখ তুলছে বলে দাবি অনেকের।

গঙ্গার জলে কুমির এল কী করে?‌ এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাও আবার কলকাতার গঙ্গায়। আগে এমন কখনও শোনা যায়নি। নানা সময়ে তাদের নানা জায়গায় দেখতেও পাওয়া যাচ্ছে বলেও খবর। দু’‌দিন ধরে এই কুমিরগুলি কলকাতা এবং হাওড়া যাতায়াত করছে। তাদের ধরাও যাচ্ছে না। আর এই কুমিরের খবর প্রকাশ্যে আসতেই শিকেয় উঠেছে গঙ্গাস্নান। ঘাটে নামতে ভয় পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কলকাতা–হাওড়ার গঙ্গায় অনেকেই নিয়মিত স্নান–সাঁতার কাটেন। তাঁরাও এখন গঙ্গার ঘাটে নামছেন না। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা গঙ্গায় নেমে মাছ ধরতে ভয় পাচ্ছেন। এই ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে দুটি অনুসন্ধান টিম তৈরি করেছে বন দফতর।

আরও পড়ুন:‌ লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি কেন?‌ বৈঠকে অসহায়তার কথা জানালেন লালপার্টির নেতারা

এদিকে শনিবার থেকে সেই টিম জোরকদমে তদন্তে নেমেছে। কলকাতা রিভার ট্রাফিক পুলিশও খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে। বন দফতরের ধারণা, কুমিরের মতো দেখতে হলেও ওই প্রাণীটি ঘড়িয়াল মনে হচ্ছে। আহিরীটোলা ফুলপট্টি ঘাটের কাছে কুমিরের মতো একটি প্রাণী গঙ্গায় দেখতে পান কয়েকজন। সাঁতার প্রশিক্ষক ভোলা পাল বলেন, ‘‌আমি সকালের দিকে গঙ্গায় সাঁতার কাটতে যাই। ঘাটে গিয়ে জানলাম, গঙ্গায় কুমির ভাসছে। তখন আর জলে নামার সাহস পাইনি।’‌ রাজ্য বন দফতরের ওয়াইল্ডলাইফ বিভাগের রেঞ্জ অফিসার মনোজ যশ জানান, বাংলার সুন্দরবনের নদী এবং খাঁড়িতে কুমির দেখতে পাওয়া যায়। কলকাতার গঙ্গায় কোনও দিন কুমির দেখা যায়নি। তাঁর বক্তব্য, ‘‌সুন্দরবন থেকে নদীপথে কলকাতায় কুমির চলে আসাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে এটা সত্যি কুমির কিনা সেটা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। সুন্দরবন ডিভিশন থেকে এক্সপার্টদের ডাকা হচ্ছে।’‌

অন্যদিকে এই খবর এখন চাউর তো হয়েছেই, উলটে নানা গুজব ছড়াতে শুরু করেছে। বন দফতরের সচিব বিবেক কুমারের কথায়, ‘‌কলকাতার গঙ্গায় কুমির আছে কিনা, সেটা আমাদের কাছে এখনও কনফার্ম নয়। তবে একটা ঘড়িয়ালকে হুগলির ভদ্রেশ্বর এবং কলকাতার আশপাশে গঙ্গায় ঘুরতে দেখা গিয়েছে। ওয়াইল্ডলাইফ বিভাগের রেঞ্জ অফিসাররা তদন্ত করে তা নিশ্চিত হয়েছেন। ঘড়িয়াল বিপজ্জনক নয়। এরা নদীর মাছ খায়। তবে ভয় পেলেই তারা মানুষকে আক্রমণ করে।’‌ কলকাতা পুলিশের রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের ওসি ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী বলেছেন, ‘‌আমরা মৎস্যজীবীদের কাছে জানতে পারি, খিদিরপুরের কাছে গঙ্গায় কুমির দেখা গিয়েছে। তখনই আমরা বন দফতরকে খবর দিই। তারা আমাদের জানিয়েছে, ওটা সম্ভবত ঘড়িয়াল।’‌