‘সহকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা কনস্টেবল পাবনার মানসিক হাসপাতালে ছিলেন’

রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে দায়িত্ব পালনকালে সহকর্মীকে গুলি করে হত্যায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য কাউছার আলী দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। এই সমস্যার কারণে একাধিকবার চিকিৎসাও নিয়েছেন বলে দাবি করছে পরিবার।

কাউছার আলীর বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড দাড়েরপাড়া গ্রামে। তিনি দাড়েরপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়াত আলীর ছেলে। গ্রামের বাড়িতে তার স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। সন্তানরা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের নবম ও অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে।

পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী জানান, ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর পুলিশে যোগদান করেন। ২০০৬ সালের আগস্ট বিয়ে হয় তার। ২০১০ সালের দিকে প্রথম মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। পরে তাকে সরকারিভাবে কয়েকবার মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। চাকরি করা অবস্থায় বেশ কয়েকবার অসুস্থ হলেও চিকিৎসা করানো হয়। তবে পারিবারিকভাবে কোনও সমস্যা ছিল না বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

কাউছারের স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন সাথী বলেন, ওর (কাওসার) মানসিক সমস্যা আছে। ২০১০ সালে একবার পাবনায় (মানসিক হাসপাতাল) থেকেছে। ১২/১৩ দুইবার এমন হয়েছে। আর ঢাকা শ্যামলীতে দুইবার ছিল। পুলিশের চাকরি হওয়ার পরে তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। সরকারিভাবে তার চিকিৎসা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, একবার রাঙামাটির অনেক দূরে পোস্টিং হয়েছিল। পরে চাকরি করবে না বলে ১৪ মাস পরে আবার ঠিকই জয়েন করেছিল। ওর যখন মানসিক সমস্যা হয় তখন খুবই অল্প কথা বলে।

কাউছার মাদকাসক্ত কি না জানতে চাইলে তার স্ত্রী বলেন, সে মাদকাসক্ত হলে আমি বাড়ি করেছি, আমার সরকারি লোন (ঋণ) আছে। সে ১৬ হাজার টাকা বেতন পায়। আমাদের ১০ হাজার টাকা দেয় বাকি টাকা ও নেই। ও যদি মাদকই গ্রহণ করবে ও পাবে কোথায়?

কাউছার আলীর সৎ ভাই মাসুদ রানা বলেন, চাকরির বেশ কিছুদিন পর থেকেই তার মাথায় সমস্যা। সমস্যা হলে বাড়িতে এসে গালাগালি ও ভাঙচুর করেন। একবার এমন সমস্যা হাওয়ার পর প্রশাসন সহযোগিতায় থানায় রাখা হয়। পরে সেখান থেকে হাত পা বেঁধে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি দুইবার এবং আমার বাবা একবার পাবনাতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করেছি। তারা দুই ভাই ও এক বোন। এরমধ্য কাওসার বড়। দুই ভাই পুলিশের চাকরি করে।

গতকাল রাতে কী ঘটেছিল প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাঁচ দিন আগে থেকেই ওর শরীর খারাপ। মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এটুকুই শুনেছি, এর বেশি কিছু জানি না।

স্থানীয় দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মহিউল ইসলাম মহি বলেন, পুলিশ সদস্য কাউছারের বাড়ি আমার ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে। আমরা সব চেয়ারম্যানরা মিটিংয়ে বসেছি। এটা শেষ হলে আপনাকে ফোন দিয়ে জানাচ্ছি। 

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা ওসি মাহাবুবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে এখনও জানি না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তবে আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে কোন নির্দেশনা আসেনি।

প্রসঙ্গত, শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর গুলশান-বারিধারার কূটনীতিক এলাকায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে কাওসারের গুলিতে মনিরুল ইসলাম নামের এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন জাপান দূতাবাসের এক গাড়িচালকও। এ ঘটনায় কাউছারকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।