Harmfulness of Smartphone: সারাদিনে হাতে মোবাইল ফোন? কোন কোন বিপদ ডেকে আনছেন

স্মার্টফোন; বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা সবাই স্বচ্ছ কাঁচের মতো ত্বক চাই। সে জন্য আমরা যে কোনো প্রান্তে যাব। হোম হ্যাক থেকে DIY ফেস প্যাক, লেটেস্ট স্কিন ট্রেন্ড অনুসরণ করে সেই সব দামী স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট – আমরা সবই করি। কিন্তু যদি সেই ডার্ক সার্কেলগুলি অব্যাহত থাকে এবং আপনার ত্বক আগের মতোই ফ্যাকাশে থাকে, তাহলে সমস্যাটি অন্য কোথাও থেকে যায়। আপনি নিশ্চয়ই তা পছন্দ করবেন না? তাহলে সমস্যাটি আসলে কথায়? তবে আমরা আপনাকে বলি যে আপনার স্মার্টফোনের সমস্যা। হ্যাঁ, হতবাক হলেও হতে পারেন! তবে একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের মতে, আপনার স্মার্টফোনের সঙ্গেই আটকে রয়েছে আপনার ত্বকের সুস্থতা।

পড়াশোনায়, কাজে, বিনোদনে— সবর্ত্রই ডিজিটাল ডিভাইজ়ের রমরমা। দীর্ঘ ক্ষণ ল্যাপটপ বা মোবাইলের ব্যবহারের চোখের নানা সমস্যায় ভোগেন অনেকে। কিন্তু অনেকেই জানেন না, সারা দিন ধরে ফোন স্ক্রোল করে যাওয়ার প্রভাব ত্বকের উপরেও পড়ে। যার ফলে কমবয়সিদের মধ্যে চামড়া কুঁচকে যাওয়া, বলিরেখা পড়ার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগনি রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচাতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন অনেকেই। কিন্তু একই রকম ক্ষতি করতে পারে ফোন, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার থেকে বিচ্ছুরিত নীলচে রশ্মি। এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকদের মত, ‘বৈদ্যুতিন যন্ত্র থেকে বিচ্ছুরিত নীল আলোর প্রভাব, সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। যার ফলে চোখ এবং চোখের চারপাশে স্পর্শকাতর ত্বকে বলিরেখা, দাগ-ছোপের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।’

সূর্যের অতিবেগনি রশ্মি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে যতটা ভয় কাজ করে, তা ফোন বা ল্যাপটপের ব্যবহার নিয়ে হয় না। কারণ, এ বিষয়ে অনেকেরই তেমন কোনও ধারণা নেই। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘ ক্ষণ এই ধরনের নীলচে আলোর সংস্পর্শে থাকলে ‘অক্সিটেসিভ স্ট্রেস’-এর মাত্রা বেড়ে যায়। যদিও এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও বিশদ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

বেঙ্গালুরুর মণিপাল হাসপাতালের পরামর্শদাতা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং কসমেটোলজিস্ট ডঃ শ্রাব্যা সি. টিপিরনেনির মতে, সোশ্যাল মিডিয়ার উপস্থিতি, যোগাযোগ বা অন্যান্য উদ্দেশ্যে মোবাইল ফোনের উপর নির্ভরতা উপেক্ষা বা হ্রাস করা যায় না। ফোনের প্রতি তীব্র আসক্তি; মানুষের মন, শরীর ও স্বাস্থ্যের ওপর বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করেই চলেছে। 

আমরা এই প্রতিবেদনে ত্বকের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যা আপনার ত্বককে চিরতরে ক্ষতি করতে পারে যদি আপনি খুব বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন।

১। ডার্মাটাইটিস –

ডার্মাটাইটিস ত্বকের বর্ণনা করার জন্য একটি শব্দ। এই সমস্যাটি সাধারণত আপনার ত্বককে লাল করে এবং চুলকায়। বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন আকারে হতে পারে। কখনও কখনও, ফোলা ফুসকুড়ি, ফোসকা বা ফ্লেক-অফও হতে পারে। যারা অ্যালার্জিতে ভুগছেন তাদের মধ্যে সেল ফোনের বিকিরণ অ্যান্টিজেনকে আরও ত্বরান্বিত করে। 

২। কুঁচকানো ঘাড় / ঘাড়ের চামড়া কুঁচকে যাওয়া –

দীর্ঘ সময় ধরে একটানা নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলে ঘাড়ে বলিরেখা হতে পারে এবং এটি বার্ধক্যের প্রাথমিক লক্ষণ। ক্রমাগত এবং নিয়মিত তাকিয়ে থাকা ধীরে ধীরে ঘাড়ের কোলাজেনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি আরও ঘাড়ের বলিরেখা সৃষ্টি করে।

৩। ডার্ক সার্কেল –

এটি সবচেয়ে পরিচিত, সর্বাধিক পর্যবেক্ষণ করা ত্বকের প্রভাবগুলির মধ্যে একটি। সেল ফোন থেকে আসা নীল আলো বা ব্লু রে’জ একজনের ঘুমের ধরণকে প্রভাবিত করে। একজন মানুষ যত কম ঘুমায়, তার চোখের নিচে ব্যাগ এবং কালো দাগের সম্ভাবনা তত বেশি থাকে।

৪। ত্বকের অ্যালার্জি এবং ব্রণ –

হ্যাঁ! এটা আপনার কাছে নতুন না মনে হতেই পারে, কিন্তু এটা সত্য। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মোবাইল ফোন ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুর প্রধান বাহক। বিশেষজ্ঞরা এমনকি মোবাইলকে পাবলিক টয়লেটের চেয়েও বেশি অস্বাস্থ্যকর বলছেন। ফোনগুলি সারাদিন অসংখ্য পৃষ্ঠের সংস্পর্শে থাকে যা ক্ষুদ্র জীবাণুগুলিকে স্থানান্তরিত করে। আমরা কখনই বুঝতে পারি না যে আমরা আমাদের শরীরে কতগুলি জীবাণু প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছি, যার ফলে ত্বকে অ্যালার্জি এবং ব্রণ হয়।

এমন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কী করবেন?

  • যে ধরনের ডিজিটাল ডিভাইজ় ব্যবহার করুন না কেন, তার পর্দার উপর অবশ্যই স্ক্রিন প্রোটেক্টর থাকতে হবে। যা তীক্ষ্ণ নীল আলো থেকে ত্বককে সুরক্ষা প্রদান করবে।
  • এই ক্ষতির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করতে যদি একটানা মোবাইল বা ল্যাপটপে কাজ না করে, মাঝেমধ্যে বিরতি নেওয়া ভাল।
  • বেশিক্ষণ মোবাইল বা ল্যাপটপের সামনে বসে থাকলে শরীরে জলের ঘাটতি হতে পারে। ত্বক শুষ্কও হয়ে পড়ে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে। ত্বকে ময়েশ্চারাইজ়ার এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করলেও ত্বকের ক্ষতি রোধ করা সম্ভব।