Unintentionally Parenting Partner: আপনি কি অনিচ্ছাকৃতভাবে আপনার সঙ্গীর অভিভাবক হয়ে উঠছেন? লক্ষণগুলো জেনে আজই সতর্ক হোন

একটি রোমান্টিক সম্পর্কে মধ্যস্থতা করতে গিয়ে আমরা আমাদের অজান্তেই অদ্ভুত আচরণ দেখিয়ে ফেলি। এই যেমন আমাদের সঙ্গীকে তার কাজের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হোক কিংবা সে কোন খাতে কত টাকা খরচ করবে তা পরিচালনা করা। অথবা যেকোনও বিষয়ে তাদের আবেগ সম্পর্কে অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে যাওয়া। এছাড়াও আমরা তাদের যে কোন বিষয় নিয়েই নিজেরাও অনেকক্ষেত্রে বেশি আবেগতাড়িত হয়ে থাকি। আর তখনই সম্পর্কে তিক্ততার প্রকাশ পায়। তাই সম্পর্কের উপর অপ্রয়োজনীয় অভিভাবকত্বের প্রভাব বোঝার জন্য এই লক্ষণগুলি শনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনিচ্ছাকৃতভাবে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকা নিচ্ছি কিনা তা সনাক্ত করা হল একটি স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যা প্রাথমিক পদক্ষেপ।

সম্পর্ক বা রিলেশনশিপ কোচ মার্লেনা টিলহন এক্ষেত্রে লিখেছেন, ‘যদি আপনি কখনও ভেবে থাকেন কেন আপনি ক্রমাগত সন্দেহ থাকার পরেও আপনার সম্পর্কের মধ্যে রয়ে যাচ্ছেন, যদিও আপনার আপনার সঙ্গীর সাথে সময় কাটাতে উপভোগ করার জন্য সংগ্রাম করেন, আপনাকে আপনার সঙ্গীর সাথে অনেক কষ্ট করে সময় কাটাতে হচ্ছে, সচরাচর আমরা আমাদের পছন্দের মানুষের সাথে সময় কাটানো উপভোগ করে থাকি, যদি আপনার ক্ষেত্রে সেটার উল্টোটাই হয়, তার উপস্থিতি উপভোগ করা খুব কঠিন হয়ে উঠছে এবং আপনি মনে করেন না যে সেটার কোন প্রয়োজন আছে অথবা এরকম ভালোবাসাও আপনি চান নি বলে আপনি একটিবারও মনে করে থাকেন, তাহলে আপনার এসবের কারণ উদঘাটন করার সময় এসে গিয়েছে। কারণ একবার যখন আপনার মনে প্রশ্ন জেগে গিয়েছে যে কি করতে আমি এই সম্পর্কে আছি, কেন আছি, তখন থেকেই আপনি সেই সম্পর্ক থেকে মুক্তি খুঁজে উঠতে চাইছেন। আপনার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আপনাকেই সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে।’

আমরা আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা আমাদের সঙ্গীর অভিভাবকের মত হয়ে গিয়েছে কিনা তা কি করে সনাক্ত করতে পারি ?

  • কনস্ট্যান্ট রিমাইন্ডার্স

আপনি কি নিজেকে সবসময় আপনার সঙ্গীকে তাদের কি করণীয়, কি করণীয় নয়, তার তালিকা সম্পর্কে মনে করিয়ে দিয়ে থাকেন? আপনি যদি ক্রমাগত একজন টাস্কমাস্টারের ভূমিকা পালন করেন তবে এটি অনিচ্ছাকৃত অভিভাবকত্বের লক্ষণ হতে পারে। এটি করার মাধ্যমে, আমরা অসাবধানতাবশত অতিরিক্ত নির্ভরতাকে উৎসাহ দিয়ে থাকি, এমনকি ক্ষুদ্রতম কাজের জন্যও তারা আমাদের উপর নির্নির্ভরশীল হয়ে ওঠে।

  • সঙ্গীর আর্থিক বিষয়ে অতিরিক্ত মাথা ঘামানো

আপনার সঙ্গীর অর্থের দায়িত্ব নেওয়া আপনার কাছে একটি যত্নশীল অঙ্গভঙ্গির মতো মনে হলেও এটি অভিভাবকত্বে পরিণত হতে পারে। আপনি যদি ক্রমাগত তাদের বিল পরিশোধ করেন এবং তাদের অর্থ পরিচালনা করেন তবে তাদের মনে এই বিশ্বাসই দৃঢ় হয় যে তারা আর্থিকভাবে সক্ষম নয়। সমর্থন অবশ্যই ভালো, কিন্তু সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তাদের বৃদ্ধিতে বাধা দিতে হয়ে দাঁড়াতে পারে।

  • জবাবদিহিতার অভাব

আপনি কি সর্বদা আপনার সঙ্গীর ভুলগুলিকে ঢেকে রাখছেন বা তাদের কোনও বিষয়ে জবাবদিহি করতে দিচ্ছেন না এই ভেবে যে তারা জবাবদিহি করতে পারবে না, ঠিক যেভাবে আমাদের ছেলেবেলায় আমাদের মা-বাবারা আমাদের ক্ষেত্রে করতেন? অথবা তাদের অবহেলা করছেন? আমরা যখন আমাদের দায়িত্ব এবং তাদের উভয়ই গ্রহণ করি তখন অভিভাবক হয়ে ওঠার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। তাদের যে কোন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করার চেয়ে তাদের সেই পরিস্থিতি থেকে কাজ শিখতে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

  • ওয়াকিং অন এগশেলস

সবসময়ই নিজেদের বিনা সংকোচে, নির্দ্বিধায়, একে অন্যকে বিরক্ত করার কোনওরকম ভয় ছাড়াই নিজেদের প্রকাশ করতে হবে। আপনি যদি কখনও ভেবে থাকেন, আপনার কথা বলা বা মন খুলে মেশা আপনার সঙ্গীর শান্তিহরণ করবে বা যা পারস্পরিক শান্তির ক্ষেত্রে ক্ষতিকর, তাহলে তা এক অস্বাভাবিক প্যারেন্টিং প্রবণতা।

  • নিজের আবেগকে মনের মধ্যেই চেপে রাখা

আপনি কি আপনার সঙ্গীকে আপনার অনুভূতি সম্পর্কে বলতে দ্বিধাবোধ করে থাকেন? আপনার কি মনে হয় যে ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ অপর মানুষটার ওপর বোঝা হয়ে যাবে? তাহলে জেনে রাখা ভালো, এটাও একপ্রকার অভিভাবকত্ব। কমিউনিকেশন ছাড়া কোনও সম্পর্কই বিকাশ লাভ করে না। তাই কখনোই খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের আবেগকে এক্সপ্রেস করতে পিছপা হবেন না।

এই লক্ষণগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে আত্মসচেতনতা, আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজন। রিলেশনশিপ কোচ মারলেনা টিলহন সেজন্য এই লক্ষণগুলি সনাক্ত করে একটি স্বাস্থ্যকর এবং আরও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সাজেস্ট করেন।

আপনি যদি এখন এই লক্ষণগুলোর সাথে পরিচিত হোন, আপনার সঙ্গীর সাথে আজই এই বিষয়ে মন খুলে আলোচনা করুন। পারস্পরিক সচেতনতা, বোঝাপড়া, খোলামেলা কথোপকথনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন। মাথায় রাখবেন, একটি সম্পর্ক সবসময়ই একটি পার্টনারশিপ যেখানে উভয়ের অবদান ও বেড়ে ওঠা পাশাপাশি চলতে থাকে।