শান্ত-সাকিবদের ঈদ উপহারের অপেক্ষায় বাংলাদেশ 

২১ বছর আগের কথা। এবারের মতো তখনও ছিল ঈদের মৌসুম। ২০০৩ সালে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজেই ঈদের আগের দিন কানাডার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। সেদিন কানাডার দেওয়া মাত্র ১৮০ রানও ছুঁতে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। লজ্জাজনক হারের পর পুরো দেশবাসীকেই তখন ‘বাজে’ একটা ঈদ কাটাতে হয়েছে। ২১ বছর পর পবিত্র ঈদুল আজহার দিন সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে আরও একটি ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ, যে ম্যাচের গুরুত্ব অনেক। সোমবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৫টায় নেপালের বিপক্ষে জিতলে শান্তর দল কেবল সুপার এইট নিশ্চিতই করবে না, বাংলাদেশিদের ঈদ আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যাবে!

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে বাংলাদেশ যেতে পারবে কিনা সেটা নির্ভর করছে এই ম্যাচের ফলাফলের ওপর। বেসরকারি টেলিভিশন নাগরিক টিভি ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৯টি বিশ্বকাপের সবক’টিতেই অংশ নিয়েছে। তারপরও সেরা সাফল্য ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত আসরটিতে দুটি ম্যাচ জিতেছে। সোমবার নেপালকে হারাতে পারলে বাংলাদেশের জয় আগের পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে যাবে। জয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে তিনে। শুধু তাই নয়, প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে খেলার টিকিটও পাবে তারা। নিশ্চিতভাবে এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবেন না কেউ।

সুপার এইটের সাতটি দল চূড়ান্ত হলেও বাকি আছে একটি দল। ডি গ্রুপ থেকে সেই দলটি কালই চূড়ান্ত হয়ে যাবে। একই গ্রুপ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার সুপার এইট নিশ্চিত করেছে। দ্বিতীয় দল হিসেবে বাংলাদেশ কিংবা নেদারল্যান্ডস যাবে সুপার এইটের এক নম্বর গ্রুপে। কাগজে কলমে নেদারল্যান্ডসের সুযোগ থাকলেও শেষ দল হিসেবে সুপার এইটে ওঠার দৌড়ে এগিয়ে বাংলাদেশই।

অবশ্য নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতলে আর কোনও সমীকরণ টিকবে না। বাংলাদেশ চলে যাবে সুপার এইটে। তবে হেরে গেলেও সুপার এইটে যাওয়ার সুযোগ থাকছে। সেক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসকে শ্রীলঙ্কার কাছে হারতে হবে। আর যদি ডাচরা জিতে যায়, সেক্ষেত্রে রান রেটের হিসাব আসবে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের নেট রান রেট ০.৪৭৮। নেদারল্যান্ডসের নেট রান রেট -০.৪০৮। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের তিন ম্যাচ থেকে পয়েন্ট ৪, নেদারল্যান্ডসের তিন ম্যাচ থেকে পয়েন্ট ২। বাংলাদেশ দল এত সমীকরণ নিয়ে নিশ্চয়ই ভাবতে চাইবে না।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান তো বলেই দিয়েছেন, নেপালকে হারিয়ে ঈদের খুশি বাড়িয়ে দেওয়ার আশা রাখছেন তিনি, ‘অবশ্যই নেপালের সঙ্গে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। জিততে পারলে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবো। আমাদের জন্য অনেক বড় একটা অর্জন হবে। ঈদের দিন, মুসলমান যারা আছি তাদের জন্য আনন্দের একটা দিন। বিশেষ করে বাংলাদেশে সবাই উদযাপন করে। অন্য ধর্মের মানুষেরাও আসলে ঈদের দিন আনন্দ করেন। আশা করবো এ রকম ঈদের একটা দিনে তাদের মুখে আরও বেশি হাসি ফোটানোর।’ 

নেপাল স্বপ্নের মতো বিশ্বকাপ কাটাতে চেয়েছিল। সেই পরিকল্পনায় অনেকটাই সফল তারা। হয়তো সুপার এইটে ওঠার সুযোগ নেই। তবে টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর সঙ্গে যেভাবে চোখে চোখ রেখে কথা বলেছে, সেই প্রাপ্তিও কম নয়। সব মিলিয়ে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে সুপার এইট নিশ্চিত করা এতটা সহজ হবে না বাংলাদেশের জন্য! কেননা প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে বাংলাদেশকে হারানোর হুংকার দিয়ে রেখেছেন নেপালের অধিনায়ক রোহিত পাওডেল, ‘আমরা সুপার এইটের অঙ্কটা জানতাম। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিততে পারলে বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচটা নকআউট হতো। এটা যেহেতু হয়নি, পরের ম্যাচ গর্বের জন্য খেলবো। আমরা টেস্ট খেলুড়ে একটি দেশকে হারাতে চাই।’

এদিকে, রবিবার ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধান কোচ মন্টি দেসাইও অধিনায়ক রোহিতের সুরেই কথা বললেন, ‘যখন এখানে এলাম, ভেবেছি এখানে কোয়ালিফিকেশনের ক্ষেত্রে কী পরিবর্তন আসবে। আমাদের দলে এমন কেউ আছে কিনা যার জন্য পরিবর্তন আনা যায়। এখানে আমাদের বাংলাদেশের কী আছে তা নিয়েও হোমওয়ার্ক করতে হবে। ফলে আমাদের মানসিকভাবে শক্ত থেকে সেরা একাদশ নিয়ে নামতে হবে এবং ম্যাচ জিততে হবে।’

সেন্ট ভিনসেন্টের মন্থর স্পিন সহায়ক উইকেটে স্পিনারদের ঘূর্ণি জাদুতে প্রোটিয়াদের ১১৫ রানে আটকে ফেলেছিল নেপাল। পুরো ম্যাচে দারুণ ক্রিকেট খেললেও শেষ ওভারে ৮ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি হিমালয়ের দেশটি। তবে যেভাবে ক্রিকেট খেলেছে, সেটি ভক্ত সমর্থকদের মন জয় করেছে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এই লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা নিয়েই বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামছে নেপাল।

নেপালের বিপক্ষে স্পিনবান্ধব উইকেট বিবেচনায় বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট একটি পরিবর্তন আনতে পারে। একজন ব্যাটার কমিয়ে অর্থাৎ জাকের আলীকে বিশ্রাম দিয়ে শেখ মেহেদীর মতো স্পিনিং অলরাউন্ডার খেলানো হতে পারে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুই দলের একবারই মুখোমুখি লড়াই হয়েছে। ওই সাক্ষাতে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে নেপালকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে নেপালের বিপক্ষে সেই ম্যাচ খেলা সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ আছেন এবারের স্কোয়াডে। এই দুজন নিশ্চিতভাবে তাদের অভিজ্ঞতাগুলো জুনিয়র সতীর্থদের মাঝে ভাগাভাগি করবেন। পাশাপাশি সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সুপার এইট নিশ্চিত করে দেশবাসীকে ঈদ উপহার দেবেন!