উৎসবের আমেজ জাতীয় চিড়িয়াখানায়

ছুটিতে রাজধানীবাসীর বড় একটি অংশ গিয়েছেন নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে। যারা ঢাকায় ছিলেন তারা আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন বেরিয়ে পড়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র ঘুরে বেড়াতে। আর রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানা। যেকোনও ছুটির দিনেই চিড়িয়াখানায় থাকে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। এই দর্শনার্থীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। তাদের পছন্দের প্রথম সারিতেই থাকে চিড়িয়াখানা।

ঈদুল আজহায় দিন সাধারণ ব্যস্ততায় কাটে। তাই মূলত ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে বিনোদন কেন্দ্রে মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে। আজও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা। সকাল থেকেই অভিভাবকদের সঙ্গে চিড়িয়াখানায় আসতে থাকে শিশুরা। তবে শিশুর সংখ্যা বেশি থাকলেও তরুণ-তরুণী এবং মধ্যবয়সী দর্শনার্থীরাও বেড়াতে আসেন এখানে। এসব দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজ ফুটে ওঠে এই বিনোদন কেন্দ্রে।

মঙ্গলবার (১৮ জুন)) রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় এই চিত্র। এ সময় কথা হয় চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীদের সঙ্গে।

সাভার থেকে পরিবারসহ চিড়িয়াখানায় বেড়াতে এসেছেন আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের দিন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় তাই গতকাল আসতে পারিনি। আজ চলে এলাম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। এখানে এসে খুবই ভালো লেগেছে। সবাই মিলে আনন্দ করে ঘুরেছি। আমার ছেলে খুব খুশি হয়েছে এখানে এসে। এতেই আমি খুশি। তার বয়স সাড়ে ছয় বছর। আগে কখনও আসেনি। তাই তার আনন্দই বেশি।

এ সময় আমজাদ হোসেনের ছেলে আইমানের সঙ্গে কথা হলে সে বলে, চিড়িয়াখানায় আমার খুবই ভালো লেগেছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে সিংহ আর জিরাফ।

যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছিলেন ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, আমার ছেলে-মেয়ে ছুটি পেলেই চিড়িয়াখানায় আসতে চায়। তারা অনেকবার এসেছে, তাও আসতে চায়। তারা পছন্দ করে বলে আমি নিয়ে এসেছি।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হরিণ দেখছেন তারা (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

বাবা-মায়ের সঙ্গে টঙ্গী থেকে বেড়াতে এসেছে শিশু জাওয়াদ হোসেন।  সে বলে, অনেক কিছু দেখেছি। সিংহ আর ভাল্লুক আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। আমার মনে হয় ভাল্লুক খুব ফ্রেন্ডলি।

আজিমপুর থেকে বন্ধুরা মিলে বেড়াতে এসেছিলেন চিড়িয়াখানায়। তারা বলেন, আমাদের সবারই মোটামুটি ছোটবেলায় আসা হয়েছে। ছোটবেলাকে রিকল করার জন্য আমরা এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিই। অনেক বছর পরে এসে দারুণ লাগছে।

ট্রেনে চড়ে, দেখে আনন্দ উপভোগ করছে শিশুরা (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসা শিশু জারিন বলে, এখানে এসে আমার খরগোশ সবচেয়ে ভালো লেগেছে। ওরা খুব কিউট। এছাড়া হাতি, ময়ুরও ভালো লেগেছে। 

এ সময় চিড়িয়াখানার প্রাণীর খাঁচার সামনে ছাড়াও ভেতরে অবস্থিত প্রাণী জাদুঘর এবং শিশুপার্কেও শিশুদের আনন্দ উদযাপন ছিল চোখে পড়ার মতো। শিশুপার্কে তারা খুশি মনে বিভিন্ন রাইডে চড়ে। আর প্রাণী জাদুঘরে তাদের শত প্রশ্ন ছিল অভিভাবকদের কাছে।

পছন্দের খেলনায় চড়ে শিশুদের মুখে হাসি (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

ইমরান হোসেন নামের এক দর্শনার্থী এসেছিলেন তার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে। তিনি বলেন, বাচ্চারা চিড়িয়াখানা বেশ উপভোগ করেছে। প্রাণী জাদুঘরে ঢুকে ওদের প্রশ্ন যেন আর শেষ হয় না!

শিশু রাইসা বলে, প্রাণী জাদুঘরে অনেক অদ্ভুত জিনিস দেখেছি। দুই মুখ একটা প্রাণী দেখেছি, অজগরের ডিম দেখেছি। দারুণ!

ভেতরে মানুষের ভিড় (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

ঈদের সময় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় আমাদের পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, র‍্যাব চিড়িয়াখানার ভেতরে ও বাইরে টহলরত আছে। এছাড়া দর্শনার্থীদের প্রবেশের সুবিধার্থে চিড়িয়াখানার প্রবেশের রাস্তায় বাঁশ দিয়ে লম্বা কিউ তৈরি করা হয়েছে। যাতে প্রবেশে কোনও সমস্যা না হয়। আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা কর্মীদের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের জন্য সচেতনতার সতর্ক বাণী প্রচার করছি। যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে। এছাড়াও দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা পশুদের মূল খাঁচার বাইরে নেট দিয়ে দিয়েছি, যাতে সামনে যেতে না পারে।

শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও এসেছেন সময়টা উপভোগ করতে (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

দর্শনার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, আজ আমাদের ৮০ হাজারের মতো দর্শনার্থী এসেছে। গতকাল ছিল ১০-১২ হাজারের মতো। কোরবানির সময় সাধারণত ঈদের দিন দর্শনার্থী কম হয়। পরের দিন থেকে বাড়ে। তবে এবার দর্শনার্থী কম হয়েছে গরমের কারণে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের এখানে পশু, পাখি, মাছ মিলিয়ে সর্বমোট ৩ হাজার ২৭৫টি প্রাণী আছে। এগুলোর মধ্যে বাঘ আছে ১২টি, আফ্রিকান সাদা সিংহ ১টি, আফ্রিকান সিংহ ৪টি, চিতাবাঘ ১টি, হাতি ৫টি, জিরাফ ৭টি, জেব্রা ৭টি, মায়া হরিণ ৮টি, চিত্রা হরিণ ২৬৭টি, গন্ডার ১টি, জলহস্তী ১১টি এবং ক্যাঙ্গারু আছে ১টি। এছাড়া আমাদের বাঘের দুটি বাচ্চা হয়েছে। ওদের বয়স আড়াই মাস চলছে।