স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ষষ্ঠ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে (১৩) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি গোয়ালন্দ বাজারের একজন হলুদ ব্যবসায়ী। জানা গেছে, তিনি আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এসবের মাঝে ঘটনার তিন দিন পর শিশুটিকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্বজনেরা। সেখান থেকে পুলিশকে অবগত করে অধিকতর পরীক্ষার জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় শিশুটিকে। পুলিশ ভিকটিম ও তার পরিবারকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর একটি অভিযোগ গ্রহণ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মামলা কিংবা আসামি গ্রেফতার, এমনকি সদর হাসপাতালে নিয়ে ভুক্তভোগী শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়নি।

১১ জুন (মঙ্গলবার) বেলা ১১টার দিকে গোয়ালন্দ পৌরসভা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী ও তার স্বজনরা জানান, ঘটনার দিন বাড়ির পাশের পাটক্ষেতের পাশ দিয়ে ওই ছাত্রী স্থানীয় এক পুকুরে কাপড়চোপড় ধুতে যায়। এ সময় সিরাজ খাঁ (৫৫) সেখানে ঘাস কাটছিল। সুযোগ পেয়ে শিশুটির গলার ঘাস কাটার কাঁচি ঠেকিয়ে পাটক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করে ওই ব্যক্তি।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) আলাপকালে শিশুটির মা বলেন, ‘আমার মেয়ে অনেকটা এলোমেলো অবস্থায় বাড়ি ফিরে এলে আমি তাকে কী হয়েছে জানতে চাই। ভয়ে প্রথমে কিছু না বললেও পরে সব জানায়। এরপর আমি বিষয়টি স্থানীয় কমিশনার, বাড়ির পাশের একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি ও তার ভাইকে জানাই। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় অপরাধী সিরাজের সঙ্গে আমার দেখা হলে সে বিষয়টি চেপে গিয়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ আমাকে ৫০ হাজার টাকা দিতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাতে এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আমাকে বোঝায়, মামলা করলে মেয়েকে আর বিয়ে দিতে পারবে না। তারচেয়ে আমরা তোমার ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিই। কিন্তু তারা সবাই আমার সঙ্গে মূলত টালবাহানা করে সময় পার করে। এর মধ্যে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ঘটনার দুই দিন পর ১৩ জুন সকাল ১০টায় তাকে গোয়ালন্দ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে এক নারী ডাক্তার পরীক্ষা করে মেয়েকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলে এবং থানার পুলিশকে খবর দেয়।’

ধর্ষণের শিকার ওই শিশুর মা বলেন, ‘পুলিশ এসে আমাদের হাসপাতাল থেকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে ওসি, এলাকার কমিশনার ও আরও পুলিশ কর্মকর্তারা ছিলেন। ওসি আমাদের কাছ থেকে ঘটনা শুনে একটি লিখিত অভিযোগও নেন। পরে বিকাল ৩টার দিকে আমাদের ছেড়ে দিলে আমরা বাড়িতে চলে আসি।’

পুলিশকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘গত ১৩ জুন সন্ধ্যায় আসামি ধরতে এলাকায় পুলিশ গিয়েছিল। কিন্তু আমার ভাই, ওই কমিশনার ও এলাকার কয়েকজন আমাকে বোঝায়, এটা নিয়ে থানা-পুলিশ করলে মেয়েকে কখনও বিয়ে দিতে পারবো না। লোকলজ্জায় মেয়েটাও আত্মহত্যা করে বসতে পারে। তাই আমরাই পুলিশকে ফিরে যেতে বলি।’

থানায় অভিযোগ দেওয়া শিশুটির বড় বোন বলেন, ‘আমরা লোকলজ্জার ভয় এবং ছোট বোনের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে অনেকটা চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সিরাজ ও তার লোকজন আমাদের সঙ্গে ছলনা করেছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রাণবন্ধু চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়ে আসামিকে গ্রেফতার করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু শিশুটির পরিবার থেকেই আমাদের বাধা দেওয়া হয়। তারা মামলা করতে আগ্রহী নয়। শুনলাম, তারা ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। অভিযুক্ত সিরাজ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে চেয়েছে। এ নিয়ে দেনদরবার চলছে। তবে ভুক্তভোগীর পরিবার চাইলে আমরা মামলা নেবো এবং আসামিকে গ্রেফতার করবো।’

এ ছাড়া টাকা নিয়ে দেনদরবারের বিষয়টি স্থানীয় কমিশনারও স্বীকার করেছেন।