গরিবের আস্থা হারিয়েছে সিপিএম, ‘দুঃসময়ের’ বিশ্লেষণে স্বীকার রাজ্য কমিটির বৈঠকে

লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বড় ধাক্কা খেয়েছে সিপিএম। একসময় ‘গরিবের পার্টি’ বলে পরিচিত এই দলের উপরে আস্থা হারাচ্ছে দরিদ্র এবং নিম্নবিত্তরা। এবারেও সিপিএম একটি আসনেও জয়লাভ করতে পারেনি। মুর্শিদাবাদ আসনে হেরে গেছেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, দমদমে পরাজিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। বাকি আসনগুলির অধিকাংশেই জামানত জব্দ হয়েছে।

এই বিপর্যয়ের পর্যালোচনা করতে বুধবার থেকে দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক বসেছিল। সেখানেই আলোচনায় উঠে এসেছে যে, গরিব মানুষ ভোট না দেওয়ায় এই শোচনীয় ফল হয়েছে। গরিব মানুষের কাছে এখনও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি দল, যা এবারের নির্বাচনে বিপর্যয়ের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

রাজ্য কমিটির বৈঠকের প্রথম দিন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছে, তৃণমূলের বিকল্প বিজেপি এবং বিজেপির বিকল্প তৃণমূল—এই বিশ্বাস থেকে এখনও মানুষকে বের করে আনা যায়নি। বেশ কিছু কেন্দ্রে বিজেপি এতটা ভোট পাবে তা ধারণার বাইরে ছিল। এছাড়াও, বেশ কিছু জেলায় সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছে।

রাজ্যে লোকসভা ভোটের ফল নিয়ে আলোচনার জন্য আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বসে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সিপিএম সূত্রে জানা গেছে, রাজ্য সম্পাদক স্বীকার করেছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে দেরি হয়েছে। আইএসএফ শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যাওয়ায় প্রার্থী ঘোষণা করতে অনেকটা সময় লেগেছে। শরিক দলের ভূমিকা নিয়েও বৈঠকে প্রশ্ন উঠেছে।

বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসা মূল কারণগুলি হল, সরকারি সামাজিক প্রকল্পে উপকৃত মানুষ তৃণমূলের উপর আস্থা রেখেছেন। গ্রামবাংলায় সংগঠন এখনও ভোটে জেতার মতো জায়গায় নিজেদের তুলে ধরতে পারেনি। তৃণমূলের বিকল্প বিজেপি এবং বিজেপির বিকল্প তৃণমূল, এই তত্ত্বেই ভোটাররা সিলমোহর দিয়েছেন। কিছু জেলার নেতৃত্বের ভূমিকাও ইতিবাচক ছিল না। গরিব মানুষের কাছে এখনও দলকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধরা যাচ্ছে না। ইন্ডিয়া জোটে একই মঞ্চে তৃণমূলের সঙ্গে থাকা নিয়েও ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বৈঠকে বক্তব্য রাখেন সীতারাম ইয়েচুরি। শাখা স্তর থেকে আলোচনা তুলে নিয়ে আসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে রাজ্য কমিটি। সিপিএমের রাজ্য কমিটি আশাবাদী, এই বৈঠকের মাধ্যমে দলের পুনর্গঠন ও ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।