পাহাড়চূড়ায় আতঙ্ক! পিরপাঞ্জাল রেঞ্জে এ কার পায়ের ছাপ? পড়িমরি ছুট শেরপাদের…

মৌপিয়া নন্দী: সুনীল গঙ্গোপাধ্য়ায়ের ‘পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক’ বাঙালি গোগ্রাসে পড়েছে। কাকাবাবু এবং সন্তুকে নিয়ে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ২০১৭ সালের ‘ইয়েতি অভিযান’ও বাঙলার দর্শক দেখেছেন। এই ইয়েতি নিয়ে আগ্রহের কোনও শেষ নেই মানুষের। ইয়েতি আছে না নেই! এই প্রশ্নের কি আদৌ কোনও উত্তর আছে!

দেখতে গেলে সেই আটের দশক থেকে শুরু করে নয়ের দশক পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে হিমালয় অভিযানে এসেছেন হাডসন, লরেন্স ওয়েডেল, কর্নেল সি কেক ও মেজর অ্যালান ক্যামেরুনের মতো অভিযাত্রীরা। তাঁরা কেউ কেউ বলেছেন যে, হিমালয়ে বিরাট পায়ের ছাপ দেখেছেন, আবার কারোর মত যে, তাঁরা ইয়েতিই দেখেছেন। ‘মেহ-তেহ’  ‘মি-গো’, ‘ক্যাং আদমি’ ‘জোব্রান’ থেকে ‘বোনমাই’! এসবই ইয়েতির বিভিন্ন নাম। এবার ‘ইয়েতি দর্শন’-এর রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা হল খোদ বাংলার পর্বতারোহী দেবাশিস বিশ্বাসের! কী চমকে গেলেন? পুরো প্রতিবেদন জুড়েই রয়েছে এমনই চমক।

পিরপাঞ্জাল ক্য়াম্পে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে দেবাশিসের। তিনি জি ২৪ ঘণ্টাকে টেলিফোনে জানিয়েছেন যে, গত ১৯ জুন তাঁদের সঙ্গে ঠিক কী হয়েছে। দেবাশিস ফোনে একনিঃশ্বাসে বলে গেলেন কথাগুলো। ‘আজকেই আমরা নেমে এলাম মানালিতে। পিরপাঞ্জাল গিরিশ্রেণিতে দু’টো শৃঙ্গ রয়েছে। একটি দেওটিব্বা (১৯,৬৮৮ ফুট) এবং অন্য়টি ইন্দ্রাসন (২০, ৪১০ ফুট)।একদম পাশাপাশি অবস্থান। ১৯ জুনের ঘটনা। সকাল ন’টা সাড়ে ন’টা হবে তখন। আমরা ক্য়াম্প ওয়ান থেকে ক্যাম্প টুয়ের দিকে যাচ্ছিলাম তখন প্রথমে একটি বড় স্নোফিল্ড পড়েছিল, সেখান থেকে আমরা যখন আইস ফিল্ডে উঠতে যাচ্ছি, তখনই দেখলাম বাঁ-দিক থেকে ডান দিকে একটি পায়ের চাপ। কেউ যেন দুলকি চালে হেঁটে গিয়েছে থপথপ করে… বেশ ছয়-সাড়ে ছয় ইঞ্চি চওড়া, সাত-আট ইঞ্চি লম্বা। তবে এটা কোনও স্নো লেপার্ড নয়, কারণ তাদের বিড়ালের মতো সামনের ও পিছনের পায়ের ছাপ পড়ে। আমার মনে হল কোনও হিমালয়ান ভাল্ল্কু হবে!’

পিরপাঞ্জালে দেবাশিস যত না চমকেছেন, তাঁর চেয়ে অনেক বেশি চমকেছেন শেরপারা। দেবাশিস বললেন, ‘ পায়ের ছাপ দেখে শেরপাদের তো একেবারে মুখ শুকিয়ে গেল। বারবার আমাকে ওঁরা বলতে থাকেন, দেখলেন কী? দেখলেন কী? কী মনে হল আপনার? আমি বললাম, না না, ইয়েতি নয়, কোনও ভাল্লুকই হবে। ওঁরা আমাকে বলে, এ ইয়েতিই। তবে ওঁরা ইয়েতি বলেন না। বলেন বোনমাই ওরফে বনমানুষ। জানি না ভবিষ্য়তে ওঁরা ইন্দ্রাসনে ইয়েতি বলে চাউর করবে কিনা! আদৌ ভবিষ্যতে কোনও শেরপা ইন্দ্রাসনে আসবেন কিনা তা নিয়েও আমার সন্দেহ রয়েছে! শিয়াল ও বিভিন্ন জন্তুর পায়ের ছাপ আগে পাহাড়ে দেখেছি বটে, তবে এটা একটু অন্য়রকম। তবে ইয়েতি কেউ দেখেছেন বা তার ছবি তুলেছেন বলে আমার জানা নেই। দেখুন আমি একেবারে উড়িয়েও দিতে পারি না। আসলে এত মানুষ তা বিশ্বাস করেন! এটা যে ইয়েতি সেটাও বলতে পারছি না, আবার যে ইয়েতি নয়, তাও বুক বাজিয়ে বলতে পারি না। কারণ শেরপারা এত বিশ্বাস করেন! কারোর বিশ্বাসে আঘাত করতে চাই না! ছবিটা তুলে কিছুটা এগিয়ে গিয়েছি। আসলে স্নোফিল্ডে বরফের প্রচুর ফাটল থাকে। আর আমরা তো চারপাশ ঘুরে দেখতে বা এক্সপ্লোর করতে আমরা যাইনি। আমরা শৃঙ্গ আহোরণ করতে গিয়েছিলাম। জোড়া শৃঙ্গ আহোরণ করে নেমে এসেছি। তবে এই পায়ের ছাপ এক উপরি পাওনা বলতে পারেন।’ দেবাশিসও কিন্তু ইয়েতির অস্তিস্ব অস্বীকার করলেন না!

(তথ্য় সহায়তায়: অর্কদীপ্ত মুখোপাধ্য়ায়) (পায়ের ছাপের ছবি সৌজন্য়ে দেবাশিস বিশ্বাস)

 

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)