সেমিফাইনাল নিশ্চিতের পর অস্ট্রেলিয়াকে হারালো ভারত

গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে সুপার এইটেও অপরাজিত থাকলো ভারত। সোমবার রোহিত শর্মার ব্যাটিং তাণ্ডবে সেন্ট লুসিয়ায় অস্ট্রেলিয়াকে ২০৬ রানের বিশাল টার্গেট দেয়। তারপর ইনিংসের মাঝপথেই নিশ্চিত করে সেমিফাইনাল। ম্যাচ শেষে বিজয়ের হাসি হেসেছে তারাই। ২৪ রানে জিতে সেরা আটের খেলা শেষ করলো ভারত। রোহিতের দল সেমিফাইনালে খেলবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আর অস্ট্রেলিয়ার সেরা চারের ভাগ্য ঝুলে রইলো বাংলাদেশের হাতে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে নাজমুল হোসেন শান্তদের বড় জয়ই কেবল পারে তাদের পরের ধাপে নিতে, সেটা ৬১ রানের বেশি ব্যবধানে নয়। তবে বাংলাদেশ যদি ৬২ (প্রথম ইনিংসে ১৬০ রান ধরে) বা তার চেয়ে বেশি রানে জেতে কিংবা আফগানিস্তান জিতে যায়, তাহলে অজিরা বিদায় নিবে। 

নেট রান রেটে ভারতকে পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে খেলতে হলে ১৫.৩ ওভারে ২০৬ রান করতে হতো অস্ট্রেলিয়াকে। সেটা তো তারা পারেইনি, হেরেও গেছে। বিশাল লক্ষ্যে নেমে ট্র্যাভিস হেডের ঝড়ো ইনিংসে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছিল অস্ট্রেলিয়া। পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেট হারিয়ে ৬৫ রান তুলেছিল তারা। ভারতের চেয়ে ৫ রান বেশি! হেডের সঙ্গে মিচেল মার্শ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের জুটিতে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের আশা টিকে ছিল। এই দুজন আউট হতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ভারতের হাতে। আর্শদীপ সিং ও কুলদীপ যাদব উইকেট তুলে নিতে থাকেন। অজিরা থামে ৭ উইকেটে ১৮১ রানে।

হেড ৪৩ বলে ৯ চার ও ৪ ছয়ে ৭৬ রান করেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন মার্শ। ইনিংসের প্রথম ওভাডে ডেভিড ওয়ার্নার (৬) আর্শদীপের শিকার হন। এরপর মার্শকে নিয়ে হেড ৮১ রানের জুটি গড়েন। ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে অজি ওপেনারের জুটি ছিল ৪১ রান। আর কেউ সেভাবে অবদান রাখতে পারেননি। আর্শদীপ ৪ ওভারে ৩৭ রানে ৩ উইকেট নেন। ২টি উইকেট নেন কুলদীপ।

টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ভালো শুরু করেছিল। প্রথম ২ ওভারে ৬ রান দিয়ে তারা ভারতের এক উইকেট তুলে নেয়। বিরাট কোহলি ৫ বলে ডাক মারেন। তারপর অজিরা দুঃস্বপ্ন দেখে! রোহিত চড়াও হন, ব্যাট হাতে অজি বোলারদের কচুকাটা করেছেন ভারতের অধিনায়ক।

মিচেল স্টার্ক তার দ্বিতীয় ওভারে ২৯ রান দেন, যা তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এক ওভারে সর্বোচ্চ খরচ। বৃষ্টির হালকা বিরতির পর রোহিত আরও ভয়ঙ্কর। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে ফিফটি করে ফেলেন তিনি। মাত্র ১৯ বলে চারটি চার ও পাঁচটি ছয়ে পঞ্চাশ ছোঁন রোহিত। ভারতের হয়ে যৌথভাবে তৃতীয় দ্রুততম ফিফটির কীর্তি গড়েন। পাওয়ার প্লে শেষে রান ১ উইকেটে ৬০। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে দুইশ ছয়ের মালিক হন রোহিত।

নবম ওভারেই ভারত একশ রান করে ফেলে, ৫২ বলে। ততক্ষণে রিশাভ পান্ত ১৪ বলে ১৫ রানে বিদায় নিয়েছেন। রোহিত থেমেছেন ১২তম ওভারে। স্টার্কের ইয়র্কারে ব্যাটে লেগে স্টাম্পে আঘাত করে বল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলে আউট হন রোহিত। সাত রানের জন্য অধিনায়ক হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান করতে পারেননি। ক্রিস গেইলের (৯৮) পেছনেই থাকতে হয় তাকে। ৪১ বলে ৭ চার ও ৮ ছয়ে ৯২ রান করেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ছয়ের মালিক হন যুবরাজ সিংকে পেছনে ফেলে।

রোহিত বিদায় নেওয়ার পর সূর্যকুমার যাদব (৩১), শিবম দুবে (২৮) ও হার্দিক পান্ডিয়ার (২৭) অপরাজিত ইনিংসে ভারত দুইশ পার করে। ৫ উইকেটে ২০৫ রান জমা হয় তাদের স্কোরবোর্ডে। ম্যাচসেরা হয়েছেন রোহিত।

ভারত তিন ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে সেমিফাইনালে। তাদের নেট রান রেট ২.০১৭। অস্ট্রেলিয়া এখনও ২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে। তাদের নেট রান রেট -০.৩৩১। আফগানিস্তান ২ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে তিনে, নেট রান রেট -০.৬৫০। আর বাংলাদেশ দুটি হার দেখেছেন, নেট রান রেট -২.৪৮৯।