আরেক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মধ্যপ্রাচ্য, এবারও ‘খলনায়ক’ ইসরায়েল

প্রায় এক বছর ধরে লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি সেনা ও হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা নিয়মিত পাল্টাপাল্টি হামলা করে আসছে। এতদিন এই হামলা সীমিত থাকলেও চলতি মাসে দুপক্ষই ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা জোরদার করেছে। একই সঙ্গে ইরানপন্থী হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি নেতারা নিয়মিত উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করছে। ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র তেল আবিবকে হিজবুল্লাহর সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনের কথা বললেও বাস্তবে তা আরও বাড়িয়ে যাচ্ছে নেতানিয়াহু সরকার। এমন পরস্থিতিতে লেবাননে নতুন করে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুজন জ্যেষ্ঠ ইউরোপীয় কূটনীতিক। খবর ডেইলি সাবাহর।

সোমবার (২৪ জুন) ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য আরেকটি বড় যুদ্ধ দেখার কাছাকাছি রয়েছে। লুক্সেমবার্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের আগে বোরেল সাংবাদিকদের বলেন, এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি প্রতিদিনই বাড়ছে। আমরা যুদ্ধ সম্প্রসারণের আগ মুহূর্তে অবস্থান করছি।

একই দিন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। এই কারণে তিনি শিগগিরই লেবানন সফরে যাবেন। বেয়ারবক বলেন, দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের জন্য আরেকটি বিপর্যয় নেমে আসবে।

গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। ইতিমধ্যে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি সেনা ও হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা নিয়মিত পাল্টাপাল্টি হামলা করে আসছে। হিজবুল্লাহ বলছে, ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনের প্রতিবাদ এবং গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদল হামাসের সমর্থনে তারা ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করছে। এসব পাল্টাপাল্টি হামলায় দুপক্ষের বহু প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

গত ১১ জুন ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার তালিব সামি আবদুল্লাহ নিহত হলে দুই পক্ষের মধ্যে এই উত্তেজনা আরও বাড়ে। দুপক্ষই শত্রু ঘাঁটি নিশানা করে হামলা জোরদার করেছে। এতে দুপক্ষের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

গত সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তারা সিএনএনকে জানিয়েছেন, লেবাননে স্থল ও বিমান হামলার প্রস্তুতির কথা যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেছে ইসরায়েল। এমনকি সম্ভাব্য এই হামলার জন্য দক্ষিণ গাজা থেকে সামরিক রসদ লেবানন সীমান্তে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করছে তেল আবিব।

আরেকজন মার্কিন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যদি হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ বেধেই যায় তাহলে ইসরায়েলের সবচেয়ে বেশি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও আয়রন ডোম প্রয়োজন হবে। এগুলো ইসরায়েলকে দেয়ার কথা বলে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

অন্যদিকে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ গত সপ্তাহে বলেছেন, দুপক্ষের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হলে ইসরায়েলের কোনো এলাকা নিরাপদ থাকবে না। এমনকি ইসরায়েলকে সহায়তা থেকে বিরত থাকতে সাইপ্রাসকে সতর্ক করেছেন তিনি।

ইরানও বলছে, ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধ জোটের অন্যান্য গোষ্ঠী চুপচাপ বসে থাকবে না। গত রোববার (২৩ জুন) ইরানি পদাতিক বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল কিউমারস হায়দারি এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন।

জেনারেল হায়দারি বলেন, যদি দলখদার ইসরায়েল লেবাননে হামলা এবং হিজবুল্লাহর সঙ্গে একটি বড় সংঘাত শুরু করে তাহলে অন্যান্য প্রতিরোধ যোদ্ধাদল চুপ হয়ে বসে থাকবে না। ইহুদিদের বিদ্বেষ মোকাবিলায় কঠোর ও সমুচিত জবাব দেয়া হবে।



বাঁধন/সিইচা/সাএ