আবার নতুন করে গড়ে উঠুক ঐতিহাসিক হলং বাংলো, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখল পর্যটন সংস্থা

হিমেল হাওয়ার চাদর গায়ে দিয়ে জঙ্গলের বুক চিড়ে এগিয়ে গেলে চোখে পড়ত সেই হলং বাংলো। যা সদ্য পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। সবুজ রঙের সেই বাংলোয় পৌঁছতে যেতে হতো নুড়ি–পাথরের পথ ধরে। চারিদিকে গাছ–গাছালি, ফুরফুরে হাওয়া এবং তার সঙ্গে প্রকৃতির স্নিগ্ধতা। এটাই ছিল হলং বাংলোর বিশেষ আকর্ষণ। পর্যটকদের কাছে এটা আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, কারণ এখানে ‘‌বন মুরগি’‌ মিলত পাতে। নৈসর্গিক পরিবেশে হিমেল হাওয়ার আলতো আদরে জলদাপাড়া অভয়ারণ্য ‘নস্টালজিক’ হয়ে উঠত। আর কি পুরনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা এলাকায় গড়ে তোলা যায় না হলং বাংলো?‌ হোক না আবার বাংলোর পুনর্নির্মাণ। এটাই চিঠিতে লিখে অনুভূতি মাখা আবেদন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে করল হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক।

এখানে ছুটি কাটাতে আসতেন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। প্রকৃতির নীরবতা তাঁকে এখানে টেনে নিয়ে আসত। এখানে একাধিক বাঙালি পদও মিলত। নিরিবিলি প্রকৃতির মধ্যে পর্যটকরা এসে একটু নিঃশ্বাস নিতেন। আজ সব অতীত। কিন্তু বাংলা ও বাঙালির স্মৃতি আঁকড়ে থাকা হলং বাংলো কি আর ফিরে পাওয়া যাবে না?‌ কাঠের তৈরি সেই বাংলোর ঐতিহ্য বজায় রেখেই পুনর্নির্মাণ হোক চাইছেন বড় অংশের পর্যটক। এখানে একবার যিনি ঘুরে গিয়েছেন তিনি আবার এখানে আসতে চাইবেন। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য খুব কম জায়গায় আছে। তাই তো হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক চাইছে প্রাচীনত্ব বজায় রেখে নতুন করে নির্মাণ হোক হলং বাংলোর।

আরও পড়ুন:‌ নবান্নের বৈঠক থেকে কেন রণংদেহী মেজাজ দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী?‌ নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য‌

এই হলং বাংলোতে এসে অনেক পর্যটকই নাইট সাফারিতে বেরিয়ে পড়তেন। আবার অনেকে হলং বাংলো সংলগ্ন মাঠে বসে প্রকৃতির কোলে স্নিগ্ধতার স্পর্শ নিতেন। সেগুলি আবার ফিরে আসুক চাইছেন অনেকে। এই বিষয়ে হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘আগের মতোই গড়ে উঠুক হলং বাংলো। ন্যাচেরাল হেরিটেজকে সাক্ষী রেখেই কাঠের সেই পুরনো বাংলো তৈরি করা হোক। বন দফতর এবং পর্যটন দফতরের সমন্বয়ে আবার গড়ে উঠুক হলং বাংলো।’‌ এই সমস্ত কথা, অনুভূতি চিঠিতে লিখে মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদন জানানো হয়েছে। তার একটি কমিটি গঠন করে নতুন বাংলো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

এই জলদাপাড়ার হলং বনবাংলোয় অগ্নিকাণ্ড নিয়ে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে বন দফতর। সেখানে ইঁদুররের কাণ্ড উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ ও দমকলের রিপোর্টও জমা পড়েছে। সব দেখেশুনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য ছয় সদস্যের একটি দলও গঠন করা হয়েছে। এবার হলং বাংলোর অগ্নিকাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে রিপোর্ট প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছেন বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। গত ১৮ জুন রাতে আগুন লেগে ভস্মীভূত হয়ে যায় ঐতিহ্যমণ্ডিত এই হলং বাংলো। শট সার্কিট থেকে আগুন লাগার কথা জানা গিয়েছে। স্থানীয় অনেকেই চোখের সামনে পুড়ে যেতে দেখেছে হলং বাংলোটিকে। জল দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি।