বায়না করে নৌকা না নেওয়ায় ‘জরিমানা’, সাউন্ড বক্সের জন্য ‘হামলা’

নৌকাভ্রমণে সাউন্ড বক্স নেওয়ার কথা বলে না নেওয়ায় ক্ষোভে ভ্রমণ থেকে ফিরলে কাওরাইদ ইউনিয়নের বটতলা (ক্ষিরু নদী) এলাকায় ওই ট্রলারে হামলা করার অভিযোগ ওঠে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। তাদের হামলা ও মারধরে পোলট্রি ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান (৩০) ক্ষিরু নদীতে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হন। পরদিন তার লাশ ভেসে উঠলে পুলিশ সেটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় বুধবার (৩ জুলাই) দিবাগত রাতে নিহতের বাবা সোনাব গ্রামের রুহুল আমিন আট জনকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় মামলা করেন।

ট্রলারে হামলা ও হত্যার ঘটনায় গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যায় গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দিবাগত রাতে শ্রীপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের পূর্ব সোনাব গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে সবুজ (২৮), কাওরাইদ (পশ্চিমপাড়া) এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে মাসুম (২৯) এবং কাওরাইদ (হিন্দুপাড়া) এলাকার মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে খায়রুল ইসলাম মীর (৪৫)।

তদন্তে ঘটনায় জড়িত থাকায় প্রমাণ পাওয়ায় তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার গাজীপুর আদালতে পাঠানো হলে আসামি সবুজ হামলা ও মারধরে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।

এ মামলার আসামিরা হলেন উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বেলদিয়া গ্রামের তমিজ উদ্দিনের ছেলে মাজহারুল ইসলাম (২৭), পূর্ব সোনাব গ্রামের জামাল ফকিরের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৮), কাওরাইদ গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে ইব্রাহিম মিয়া (২৫), স্বপন মিয়ার ছেলে হামিদুল ইসলাম (২৫), জামাল উদ্দিনের ছেলে রিফাত হোসেন (২৫), জয়নাল আবেদীনের ছেলে সাব্বির হোসেন (২৬), মজনু মিয়ার ছেলে আকাশ মিয়া (২৫) এবং হৃদয় (২৪)।

গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শহীদুল ইসলাম মোল্লা জানান, গ্রেফতার আসামিদের কাছ থেকে নৌকা ভাড়ার জন্য বায়না করে ব্যবসায়ীরা। পরে তাদের কাছ থেকে নৌকা না নিলে আসামি খায়রুল ইসলাম মীর ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও আদায় করে। ভ্রমণ শেষে ফেরার পথে একজন ফোনে খায়রুলকে বলে আমাদের কাছ থেকে যে ২০ হাজার টাকা নিয়েছো সেটা ফেরত দিয়ে দিয়ো। এ বিষয়টি খায়রুল ফোন করে তার সহযোগী অপর আসামি সাইফুলকে বলে, তাদের সঙ্গে থাকা চার নৃত্যশিল্পীকে রেখে দিতে। পরে গ্রেফতার তিনজনসহ তাদের আরও ১০-১২জন সহযোগী অন্য ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করে লোহার রড, কাঠের ব্যাট, হকিস্টিক ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ভ্রমণ থেকে ফিরে আসা ব্যবসায়ীদের নৌকা ধাওয়া করে। রাত ৮টার দিকে শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বটতলা (ক্ষিরু নদী) এলাকায় পৌঁছালে তারা অতর্কিতে নৌকায় হামলা করে। তাদের হামলা ও মারধরে ২০-২৫ জন নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণে রক্ষা পায়। আমন্ত্রিত নৃত্যশিল্পীরাও যে যার মতো পালিয়ে যায়। হামলাকারীদের ভয়ে ট্রলারযাত্রী পোলট্রি ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান নদীতে ঝাঁপ দিলেও উঠতে না পেরে নিখোঁজ হন।

প্রসঙ্গত, গত রবিবার (৩০ জুন) কাওরাইদের ৩০-৩৫ জন ব্যবসায়ী ট্রলারযোগে ভ্রমণে যান। ভ্রমণ শেষে ফিরলে আসামিরা শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বটতলা এলাকায় ক্ষিরু নদীতে ব্যবসায়ীদের ট্রলারে হামলা করে। তাদের হামলায় পোলট্রি ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান ক্ষিরু নদীতে পড়ে গিয়ে নিহত হন। পরদিন সোমবার (১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় বটতলা এলাকায় নদী থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। নিহত নুরুজ্জামান কাওরাইদ ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাব গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে।