অফিস সহকারীর স্ত্রীর ৬৩ লাখ টাকার সম্পদ ও পাঁচতলা বাড়ি, দুদকের মামলা

সম্পদের তথ্য গোপনসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মিহির কুমার ঘোষ ও তার স্ত্রী শিল্পী রাণী ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত বুধবার (০৩ জুলাই) দুপুরে দুদকের সমন্বিত কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. ইমরান খান তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামি মিহির কুমার ঘোষ (৫১) ও তার স্ত্রী শিল্পী রাণী ঘোষ (৪২) শহরের মৌড়াইল এলাকার বাসিন্দা।

মিহির নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সাবেক অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ছিলেন। বর্তমানে একই পদে বিজয়নগরে কর্মরত রয়েছেন। একটি মামলায় মিহিরকে এবং অপর মামলায় স্ত্রী শিল্পী ও তার সহযোগী হিসেবে মিহিরকেও আসামি করা হয়।

শিল্পী ও মিহিরের মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালে দুদক অনুসন্ধান শেষে শিল্পী ও মিহিরের বিষয়ে দুর্নীতির প্রাথমিক তথ্য পায়। দুদক আইন-২০০৪ এর ২৬ (১) ধারামতে ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট তাদের কাছে সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ দেয় দুদক। ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দুদকের কুমিল্লার সমন্বিত কার্যালয়ে সম্পদ বিবরণী পাঠান তারা।

এর মধ্যে শিল্পীর দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৩৬ লাখ ৬৬ হাজার ৭৮২ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৪১ টাকার অস্থাবর সম্পদের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তার নামে ৩৯ লাখ ৫৬ হাজার ২৬ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৪১ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পায় দুদক। পারিবারিকসহ অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় আট লাখ ২৬ হাজার ২৯১ টাকা। পারিবারিক ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসহ তার নামে মোট ৬৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৫৮ টাকার সম্পদের সন্ধান পায় দুদক। তিনি ২০১০-১১ করবর্ষে আয়কর নথি খোলেন। সেসময় গৃহ সম্পদ ও ব্যবসা থেকে আয় ছিল ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৯ টাকা। জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সম্পদের গরমিল পাওয়া যায়। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ৫৩৯ টাকা। তিনি সম্পদ বিবরণীতে ৫২ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৩ টাকার সম্পদ উল্লেখ করলেও দুদক অনুসন্ধানে ৫৫ লাখ ২৪ হাজার ৬৭ টাকা পায়। তিনি সম্পদ বিবরণীতে দুই লাখ ৮৯ হাজার ২৪৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। 

২০১০-১১ সালের আয়কর নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই আয়বর্ষে ব্যবসা থেকে আয় দেখান পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। কিন্তু সেসময় ব্যবসার পুঁজি দেখান মাত্র দুই হাজার টাকা। এতে বোঝা যায়, আয়কর নথি খোলার পূর্বে তার নামে কোনও প্রকার ব্যবসা ছিল না। স্বামী মিহির কুমার অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ স্ত্রীর নামে দেন। সেইসঙ্গে অবৈধ অর্থ দিয়ে ২০১০-১১ সালে পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করে দেন। সম্পদের মিথ্যা তথ্য ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে দুদক আইন-২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাত্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন তিনি। এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

একইভাবে মিহির কুমার দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। বিবরণীতে স্থাবর সম্পদ হিসেবে ২৩ লাখ ৬০ হাজার এবং অস্থাবর সম্পদ ১৫ লাখ ১০ হাজার ৯৬৯ টাকার তথ্য দিয়েছেন। যাচাইকালে দেখা যায়, তার নামে ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা স্থাবর সম্পদ পাওয়া গেলেও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায় ১৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬৯১ টাকার। অর্থাৎ তিন লাখ ৭৬ হাজার ৭২২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। যা দুদক আইন-২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযাগ্য অপরাধ। তাই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. ইমরান খান বলেন, ‘সম্পদের তথ্য গোপনসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করায় মিহির কুমার ও তার স্ত্রী শিল্পী রাণীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’