বেড়েছে মশার উপদ্রব, বিশেষ অভিযানে সিটি করপোরেশন

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ বেড়েছে মশার উপদ্রব। শুধু রাতে নয়, দিনের বেলায়ও মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। রাজধানীবাসীর অভিযোগ, আগে মশক নিধনে নিয়মিত ওষুধ দেওয়া হলেও, এখন আর নিয়মিত দেওয়া হয় না। তবে বিষয়টি আমলে নিয়ে মশার উপদ্রব কমাতে, বিশেষ করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এবার বিশেষ অভিযানের কথা জানিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৬, ২৯, ৩৭, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৫২, ৫৩, ৬১ ও ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে মশার উপদ্রব বেড়েছে। অন্যদিকে উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৮, ৩৯, ৪১, ৪২, ৪৪, ৪৫ ও ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে আগের তুলনায় মশার উপদ্রব অনেক বেড়েছে।

ডিএসসিসির ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাহার চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একটা সময় সিটি করপোরেশন নিয়মিত মশক নিধনে ওষুধ ব্যবহার করতো কিন্তু এখন আর মশার ওষুধ দেওয়া হয় না। যে কারণে এখন আগের থেকে মশা অনেক বেড়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারবো, গত দুই মাসে এই এলাকায় একবারও ওষুধ দেওয়া হয়নি। আগে আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত ওষুধ দেওয়া হতো। কিন্তু সেটা এখন আর চলমান নেই। সিটি করপোরেশনের লোকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলে মশা তো এখন নাই। তাই কম দেওয়া হয়।

পুরান ঢাকার ধোলাইখাল এলাকার বাসিন্দা ফারুক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বৃষ্টি হলেই মশা বেড়ে যায়। আশপাশে ময়লা আবর্জনা না দেখলেও কোথা থেকে যেন মশা আসে আল্লাহ ভালো জানেন। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। সিটি করপোরেশন থেকে আগে মশা মারতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হতো, এখন তা দেখা যায় না।

সিটি করপোরেশনের প্রতি এই বাসিন্দা আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখনও বর্ষা মৌসুম পুরোপুরি আসেনি। আগেভাগেই মশা তাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। নয়তো অবস্থা বেগতিক হবে।

ডিএনসিসির বাসিন্দা নিলুফার জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাসা থেকে ১০০ গজ দূরেই আবর্জনার খাল। মশা মারতে ওষুধ দিলেও যেখানে মশার উৎপত্তি সেটা পরিষ্কারে কোনও কাজ হচ্ছে না। খালে ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। নোংরা পানির দুর্গন্ধ টেকা দায়। খাল যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকে, তাহলে মশার উপদ্রব কমবে কীভাবে? সিটি করপোরেশন উচিত নিয়মিত মশক নিধনের ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি খালের বর্জ্য অপসারণ করা। কারণ বৃষ্টি হলে খালে বা আশপাশের যত জায়গায় মশা বাসা বাঁধে, বৃষ্টির কারণে মশার ঘর ভেঙে যায়, তখন আমাদের ঘরে আসে।

মিরপুরের বাইশটেকী এলাকার বাসিন্দা ও কলেজ শিক্ষার্থী রাতুল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সত্যি বলতে গত দুই-তিন মাস মশা তেমন একটা দেখা যায়নি। আরামে ছিলাম। ঘুমানোর সময় মশারি টাঙানোর প্রয়োজন হয়নি। এখন কয়েল জ্বালাই, মশারি খাটিয়ে ঘুমাই, তারপরও মশার কামড়ে রাতে ঘুম ভেঙে যায়। আমার এইচএসসি পরীক্ষা চলতেছে। মশার কারণে পড়ায় মনোযোগ দিতে পারি না।

মশক নিধনের ওষুধ দেওয়ার বিষয়ে এই বাসিন্দা বলেন, আগে দেখতাম সিটি করপোরেশনের লোকজন ওষুধ দিতো, কিন্তু এখন তেমন একটা দেখি না।

মিরপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়া এলাকায়ও মশার উপদ্রব বাড়ার কথা জানান সেখানকার বাসিন্দারা। এ ছাড়া মিরপুরের আহমদ নগর, ভাষানটেক, ভাটারা, বেরাইদ, সাতারকুল, মৈনারটেক ও দক্ষিণ খান এলাকায় মশার উপদ্রব বাড়ার অভিযোগ করেন সেখানকার বাসিন্দারা।

এদিকে ঢাকা সিটিতে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, এ বছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চেয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে যেসব ডেঙ্গু রোগী লক্ষ করা যায়, তাদের বেশির ভাগই গত সপ্তাহে আক্রান্ত।

মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জ্বর মাথাব্যথা ও শরীর ব্যথা নিয়ে গত চারদিন ধরে সেই হাসপাতালে ভর্তি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ টুটুল। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ১০৪ ডিগ্রি জ্বরে টিকতে না পেরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। লক্ষণ ভালো না দেখে ডাক্তার কিছু টেস্ট দিয়েছিলেন। পরে জানতে পারি ডেঙ্গু পজেটিভ। বন্ধুদের যত্নে এখন মোটামুটি সুস্থ আছি। তবে আগের মতো খাওয়ার স্বাদ এখনো টের করতে পারছি না।

বিশেষ অভিযান চালাবে দুই সিটি
মশার উপদ্রব বাড়ার বিষয়টি ইতোমধ্যেই টের পেয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ফলে মশার উপদ্রব কমাতে ‘বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম’-এর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। তবে চার দিন ‘বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম’ পরিচালনা করবে।

গতকাল (সোমবার) দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ১৭০ টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ৪২টি প্রাইমারি স্কুল, ৭টি মাধ্যমিক স্কুল ছিল, ২৫টি কলেজ, ১৮টি মাদ্রাসা এবং ১৭টি কিন্ডারগার্টেন ছিল। এ ছাড়া আগামী ১০, ১৫ ও ২২ জুলাই বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার কথা জানান ডিএসসিসির এই কর্মকর্তা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ডিএনসিসি গত এপ্রিল ও মে মাসব্যাপী সচেতনতামূলক প্রচার ও মশক নিধন অভিযান সম্পন্ন করেছে। এই অভিযান এখনও চলমান আছে। এখন যেহেতু বর্ষা মৌসুম, আমরা সামনে বিশেষ অভিযান চালাবো। তা ছাড়া যেসব পরিত্যক্ত দ্রব্যে পানি জমে এডিসের লার্ভা জন্মাতে পারে, সেসব দ্রব্য উত্তর সিটি করপোরেশন কিনে নিচ্ছে। তার মধ্যে ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, আইসক্রিমের কাপ, দইয়ের কাপ, পুরোনো টায়ার, কমোড, রঙের কৌটা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

ডিএনসিসির বিশেষ অভিযান সম্পর্কে স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত ওষুধ প্রয়োগ করা এবং পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে এসবের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা জরুরি। জনগণ সচেতন না হলে সিটি করপোরেশনের একা কাজ করা কঠিন। জনগণের মাঝে বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে, এডিসের লার্ভা যেন কোনোভাবেই জন্মাতে না পারে, সে জন্য নিজেদের ঘরবাড়ি, অফিস পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ছাদ, বারান্দা, পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড—এগুলোতে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। বর্ষা শুরুর আগেই আমরা এ বছর মশক নিধনে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করেছি। সামনে আরও কার্যক্রম চালাবো।’