‘‌আমরা জাতীয়তাবাদী মুসলমানের পক্ষে’‌, শমীকের মন্তব্যে ‘‌একা’‌ হয়ে গেলেন শুভেন্দু‌

রাজ্য বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে আড়াআড়ি বিভক্ত হয়ে পড়ার ছবি সামনে চলে এসেছে। তার মধ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হিন্দু–মুসলিম বিভাজনের মন্তব্য বাংলার মাটিতে বিজেপির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি করে দিয়েছে। যদিও বিপাকে পড়ে তাঁকে সমর্থন করেনি বঙ্গ বিজেপির নেতারা। তাতে মতের অমিল হওয়ার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, শুভেন্দুর বিতর্কিত বক্তব্য়ের পরই তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে দলের অবস্থান স্পষ্ট করলেন রাজ্যসভার সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। দূরত্ব তৈরি করলেন শুভেন্দুর বক্তব্যের সঙ্গেও।

একই পথে হাঁটলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। সুতরাং জটিল হয়ে উঠল পরিস্থিতি। ক্রমেই দলের মধ্যে নিজে ‘‌একা’‌ হয়ে পড়লেন শুভেন্দু অধিকারী। কেউ তাঁকে সমর্থন করলেন না। সদ্য লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। এমনকী রাজ্যের চারটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনেও শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে পদ্মপার্টিকে। সেখানে সংখ্যালঘু মোর্চা তুলে দেওয়া বা সবকা সাথ সবকা বিশ্বাস নীতি বদলের ডাক শুভেন্দুকে ‘‌একা’‌ করে দিল। শুধু তাই নয়, সাম্প্রদায়িক বিভাজন তাঁর মন্তব্য উঠে আসায় বিজেপির অন্দরে অস্বস্তি চরমে উঠেছে।

আরও পড়ুন:‌ বিজেপির দুই সাংসদ কি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন?‌ মাহেন্দ্রক্ষণ একুশে জুলাই ইঙ্গিত কুণালের

বাংলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু। তার মধ্যে বেশিরভাগই মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত। সেখানে সরাসরি এই সম্প্রদায়কে বাদ দিয়ে রাজনীতি করার কথা বলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাতেই বিভাজনের মারাত্মক নীতি দেখতে পাচ্ছেন বাংলার মানুষজন। সরাসরি দলের বৈঠকে হিন্দু–মুসলিম বিভাজন করার প্রস্তাব আরও বিজেপিকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিল বলে মনে করছেন অনেকে। এই আবহে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে নামেন শমীক ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, ‘‌১৪০ কোটি ভারতবাসীর জন্য় রাজনীতি করে বিজেপি। বিজেপি জাতীয়বাদী মুসলমানদের পক্ষে। তাঁরা বিজেপিকে ভোট দিক বা না দিক।’‌

এরপরই কাজি নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে সৈয়দ মুজতবা আলিকে টেনে আনেন শমীক। তিনি বলেন, ‘‌নজরুল ইসলামের একটি নির্দিষ্ট ভূমিকা ছিল। ভারতের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ পোঁতার বিরোধিতা করেছিলেন কাজি নজরুল ইসলাম। আমরা পশ্চিমবঙ্গে আবার একজন সৈয়দ মুজতবা আলিকে চাই। আমরা জাতীয়তাবাদী প্রত্যেক মুসলমানের পক্ষে। কিন্তু যাঁরা একবার এই দেশ ছেড়ে গিয়েছিলেন, ওপার থেকে আসছেন এবং সাইলেন্ট ডেমোগ্রাফিক ইনভেশনের মধ্যে দিয়ে বিনাযুদ্ধে ভারত দখলের ছক করছেন তাঁদের আমরা চিহ্নিত করব এবং আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে।’‌ আর চাপে পড়ে ঢোঁক গিলে শুভেন্দু বলছেন, ‘‌বিজেপিকে শুধুমাত্র সনাতনী হিন্দুরা ভোট দিয়েছে। সংখ্য়ালঘু বিশেষ করে মুসলিমরা বিজেপিকে ভোট দেয়নি। এবার ৯৫ শতাংশ মুসলমান তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে। আমি যা বলেছি তার সঙ্গে মোদীজির সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের কোনও সম্পর্ক নেই। আমি আমার রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছি।’‌