পাড়ার বৌদির ছবি গোপনে তোলায় মামলা গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে, তারপর কী ঘটল?‌

পাড়ার বৌদিকে ভাল লেগেছিল। তাই তিনি যখন হেঁটে যাচ্ছিলেন তখন পড়শি যুবক নিজের বাড়ির জানালা দিয়ে গোপনে মোবাইল ফোনে ছবি তোলেন। কিন্তু ওই মহিলাকে কোনওরকম বিরক্ত করেননি যুবক। তবে এই কাজের জন্য ওই যুবকের বিরুদ্ধে দর্শকাম বা ভয়ারিজমের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেন ওই মহিলা। যদিও এই মামলা পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এই বিষয়ে বিচারপতি বিভাসরঞ্জন দে তাঁর পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন, গোপনে মহিলার ছবি তোলা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪সি ধারায় ভয়ারিজম এবং পিছু ধাওয়া করার সামিল। তবে সেটা যে ঘটেছে তা প্রমাণও করতে হবে।

পাড়ার বৌদি এই গোপনে ছবি তোলার বিষয়টি ধরে ফেলেছিলেন। তাতেই ফ্যাসাদে পড়ে পড়শি যুবক। তাই ২০১৬ সালে ওই গৃহবধূ পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে ওই মহিলা জানান, তিনি যখন মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যান এবং সংসারের প্রয়োজনে বাজারে যান তখন ওই পড়শি যুবক গোপনে তাঁর ছবি তোলেন। পড়শি ওই যুবক নিজের মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলেন। এমনকী বধূর অভিযোগ, একদিন রাস্তায় বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন ওই যুবক তাঁর ছবি তুলে নিজের বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়েন। ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ঝলকানি চোখে পড়তেই বুঝতে পারেন তাঁর ছবি তোলা হয়েছে। মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই যুবকের বিরুদ্ধে পিছু ধাওয়া করার মামলা করে পুলিশ।

আরও পড়ুন:‌ ‘‌বুকে রক্ত থাকতে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূল হাত মেলাবে না’‌, একুশের মঞ্চ থেকে হুঙ্কার মমতার

তখন থেকেই কলকাতা হাইকোর্টের রাস্তায় পাড়ি দিতে হয় ওই পড়শি যুবককে। এই মামলাকে চ্যালেঞ্জ করেন অভিযুক্ত যুবক। আর আদালতে দাবি করে বলেন, ‘প্রোমোটারকে চাপ দিতেই এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রোমোটারের থেকে গাড়ি রাখার জন্য অন্য একটি জায়গা চেয়েছিলেন প্রতিবেশী মহিলা। যাতে তাঁদের অধিকার থাকে না।’ এরপরই ওই অভিযোগকারী মহিলার আইনজীবী পাল্টা সওয়াল করে জানান, সম্পত্তি নিয়ে যে ঝামেলা চলছে তার জন্য অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা আটকে যেতে পারে না।

দু’‌পক্ষের সওয়াল জবাব মন দিয়ে শোনেন বিচারপতি। তারপর কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘মহিলার সম্মান রক্ষা এবং শৃঙ্খলার জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪সি ধারা আছে। প্রকাশ্য জায়গায় মহিলাদের নিরাপত্তা দিতেই এই আইন গড়ে উঠেছে। আর মহিলাদের অসম্মান করলে এই ধারায় শাস্তি দেওয়া হয়।’ কলকাতা হাইকোর্ট সূত্রে খবর, ৩৫৪সি ধারায় মামলায় কোনও মহিলাকে কোনও পুরুষ পিছু ধাওয়া করলে তবেই এই ধারা প্রয়োগ হবে। ওই মহিলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পুরুষকে পদক্ষেপ করতে হবে। একাধিকবার যদি ওই পুরুষ পিছু ধাওয়া করে তাহলেই ৩৫৪সি ধারায় মামলা করা যাবে। কিন্তু এই মামলায় বিষয়গুলি স্পষ্ট নয়। তাই মামলা খারিজ হয়ে যায়।