বাংলার সাপ কামড়ালে তার চিকিৎসা করতে অনেকাংশেই ব্যর্থ প্রচলিত ওষুধ! তাই রাজ্যে এভিএস তৈরির দাবি

১০ ভায়াল অ্যান্টি-ভেনম সিরামও কম পড়ল শিশুর জন্য, শেষে ২০ ভায়ালে হল কাজ। তবে প্রাণ বাঁচলেও নষ্ট হয়ে গেল কিডনি। সাপে কামড়ানোর একঘণ্টার মধ্যে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ভাঙড়ের এই শিশুকে আনা হয়, তারপর শুরু হয় তার চিকিৎসা। আর তারপরই ঘটে এই কাণ্ড।

ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে এক মধ্যবয়সি মহিলার সঙ্গেও ঘটে একই ঘটনা। আন্তর্জাতিক প্রোটোকল অনুসারে ১২ থেকে ২০ ভায়ালেই তাঁর বিপন্মুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু পরিস্থিতির সামলা দিতে ব্যবহার করা হয় ৩৪ ভায়াল। তবে এতে যে সম্পূর্ণ ভাবে স্নায়বিক সমস্যা এড়াতে পেরেছেন তিনি, তেমনটা নয়। গত বছর নিউটাউনেও দু’টি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বর্তমানে এ ধরনের খবর প্রায়শই শোনা যায়। চিকিৎসকদের মতে, সঠিক সময়ে এভিএস প্রয়োগ করেও সাপে কামড়ানো রোগীকে প্রায়ই বাঁচানো যাচ্ছে না, আবার অনেক ক্ষেত্রে বেঁচে গেলেও হচ্ছে অঙ্গহানি।

আরও পড়ুন: বিয়ের পর জামনগরে প্রথম পা রাখলেন অনন্ত-রাধিকা! ঢাক-ঢোল বাজিয়ে হল অভ্যর্থনা, পাতা হল গোলাপের কার্পেট

কারণ আশানুরূপ কাজ হচ্ছে না সাপের বিষের প্রচলিত ওষুধ অ্যান্টি-ভেনম সিরামে। চিকিৎসকদের মতে, দক্ষিণ ভারতের সাপের বিষ থেকে এভিএস-গুলি তৈরি হয় বলেই অন্যান্য বহু রাজ্যের মতো বাংলার সাপের বিষের মোকাবিলা করে উঠতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে বাংলার উচিত নিজস্ব এভিএস তৈরি করা। আর তাঁদের এই প্রস্তাবের কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেয় একাধিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।

এদের মধ্যে অন্যতম হল ‘অ্যাভয়েডবল ডেথ নেটওয়ার্ক’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। তাদের রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর স্নেহেন্দু কোনার এক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘মূলত তামিলনাড়ুর মহাবলীপুরম ও সংলগ্ন জেলার সাপ থেকে যে বিষ সংগ্রহ করা হয়, সেটিই এ দেশে এভিএস তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করে পুনে, মুম্বই, হায়দরাবাদ ও কসৌলির ল্যাবগুলি। এভিএস প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিও ওই ল্যাবের তৈরি অ্যান্টিবডি কাজে লাগিয়ে এভিএস উৎপাদন করে। কিন্তু পূর্ব ভারতের, বিশেষ করে বাংলায় সাপের বিষের মধ্যে থাকা প্রোটিন, দক্ষিণী সাপের বিষের প্রোটিনের থেকে গঠনগত দিক থেকে অনেকটাই আলাদা। ফলে প্রচলিত এভিএস বাংলার সাপে কাটা রোগীদের শরীরে সঠিক ভাবে কাজ করছে না।’

আরও পড়ুন: সমালোচনার মুখে পড়লেই আপনার মনমেজাজ প্রচণ্ড খারাপ হয়ে যায়? কোনও ট্রমা তাড়া করছে না তো

রাজ্যের স্নেকবাইট ট্রেনিং কর্মসূচির প্রধান চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদারের মতে, এই সমস্যার ফলে যে রোগীর ১০ ভায়ালে কাজ হয়ে যাওয়ার কথা, তাঁকে ৩০ ভায়াল দিতে হচ্ছে, তাতেও প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না অনেক সময়ে।

তবে স্বাস্থ্যভবন দেখাচ্ছে আশার আলো। শোনা গিয়েছে সব ঠিক থাকলে হয়তো এ রাজ্যেই আগামী দিনে এভিএস তৈরি করবে কলকাতার কেন্দ্রীয় সংস্থা বেঙ্গল কেমিক্যাল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা কবে বাস্তাবায়িত হবে, তা এখনই বলা মুশকিল। তবে এর আগে স্থানীয় সাপের বিষ সংগ্রহের জন্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে স্নেক ভেনম কালেকশন সেন্টার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।