গুলিবিদ্ধ শিহাব হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই আটক

মাত্র ছয় মাস বয়সেই মাকে হারিয়েছেন। বাবাও শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাই দাদির কাছে বেড়ে ওঠেন শিহাব (১৮)। চাচাদের সামান্য সহযোগিতায় চলে তাদের পরিবার। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী শিহাব টিউশনি করে নিজের খরচ জোগাড় করতেন। পাশাপাশি ছোটখাটো কাজ করে নিজেও পরিবারকে সহযোগিতা শুরু করেন।

রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন শিহাব। এখন পর্যন্ত সাত বিষয়ের পরীক্ষা দেন তিনি। আশা ছিল ভালো কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। কিন্তু চলমান কোটা আন্দোলনের সময় তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।

গত ১৯ জুলাই বাসার জন্য বাজার করতে বের হন শিহাব। মাতুয়াইল মেডিক্যাল-সংলগ্ন এলাকায় যেতেই গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে ২৪ জুলাই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বাসার উদ্দেশ্যে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় তাকে আটক করে শাহবাগ থানা পুলিশ।

শিহাবের পরিবারের দাবি, কোটা আন্দোলন বা কোনও ধরনের নাশকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না তিনি। মূলত বাসার জন্য বাজার আনতেই বের হয়েছিলেন শিহাব। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন। ঢামেক হাসপাতালে কয়েক দিন চিকিৎসার পর ছাড়পত্র পান। সেখান থেকে বের হতেই তাকে আটক করে পুলিশ।

শিহাবের আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এলাস মাহমুদ জানান, শিহাবকে আন্দোলনে নাশকতার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। এখন থানাতেই আছে। আগামীকাল কোর্টে হাজির করা হবে।

শিহাবের চাচা লিয়াকত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিহাব ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্ট করেছে। ছয় মাস বয়সে ও মাকে হারায়। ওর বাবা প্রতিবন্ধী হওয়ায় ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারেননি। অভাব-অনটনের পরও আমরা সব ভাই মিলে তাকে সহযোগিতা করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে শিহাবের ফোন দিয়ে জানানো হয়, এই ফোনের মালিক গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আছে। পরে আমি আমার মাকে (শিহাবের দাদি) জিজ্ঞেস করি শিহাব কোথায়? তিনি বললেন শিহাব বাজার করতে গেছে। পরে দ্রুত হাসপাতালে যাই। এক ঘণ্টা পর তাকে খুঁজে বের করি।’

লিয়াকত আলী আরও বলেন, ‘গত ২৪ জুলাই হাসপাতাল থেকে যখন শিহাব বের হয়, সঙ্গে ছিল আমার ছেলে ও আমার ভাই। তারা আমাকে জানায় যে শিহাবকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ তাদের বলে, “সন্দেহভাজন দেখে নিয়ে যাচ্ছি। নিরপরাধ হলে ছেড়ে দেবো।” আমরা গরিব মানুষ, পুলিশের সঙ্গে কী আর তর্ক করবো? ছেলে আর ভাইকে বললাম পুলিশের পিছু পিছু যেতে। পরে আমিও থানায় এলাম কিন্তু তারা আমার ভাতিজাকে ছাড়েনি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিহাবের এক সহপাঠী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওর মতো ভদ্র ছেলে আর নেই। ও যথেষ্ট মেধাবী। পুলিশ তাকে যে অভিযোগে আটক করেছে, তা কখনও বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ শিহাব সব সময় নিরিবিলি থাকে। গত দুই বছরে তাকে কোনও ঝামেলায় জড়াতে বা কারও সঙ্গে বাগবিতণ্ডাও করতে দেখিনি।’

এদিকে শিহাবের আটকের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কবি নজরুল কলেজ সাংবাদিক সমিতি।

এ বিষয়ে কবি নজরুল কলেজ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি যায়েদ হোসেন মিশু বলেন, ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু। কিন্তু সেই বন্ধুর কাছে জনগণ এখন প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার। অপরাধ করে একজন আর ফেঁসে যায় নিরপরাধ সাধারণ শিক্ষার্থী। পুলিশের উচিত আরও দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করা। নয়তো মানুষ আস্থা হারাবে।’