রোলাঁ গারোতে নাদালের ম্যাচে একদিন

এই মুহূর্তে প্যারিসের ১৩৩ বছরের পুরোনো রোলাঁ গারোতে আসলে আপনি হয়তো দ্বিধা-বিভক্তিতে পড়ে যেতে পারেন। প্রধান গেটের ভেতরে ঢুকতে না ঢুকতেই দর্শনার্থীদের ভিড়। আশপাশের প্রতিটি কোর্টে চলছে খেলা। যে যার মতো ডিজিটাল বোর্ড দেখে পছন্দের খেলোয়াড়ের গ্যালারি বাছাই করে নিচ্ছেন। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল ক্লে কোর্টের রাজা রাফায়েল নাদাল যেখানে লড়ছেন, সেই সেন্ট্রাল ফিলিপ্পে ছাত্রিয়ের কোর্টে। ১৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন গ্যালারি ছিল টইটম্বুর। কোনও আসন ফাঁকা পাওয়া ছিল দুষ্কর। নাদালের টানেই বুঝি পুরো গ্যালারি ছিল উন্মাতাল!

তেমনটা না হওয়ার কোনও কারণও নেই। ৩৮ বছর বয়সে কী পাননি নাদাল! ২২টি গ্র্যান্ডস্লাম পুরুষ একক শিরোপা জিতেছেন, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ৯২টি এটিপি একক শিরোপা জিতেছেন, যার মধ্যে রেকর্ড ১৪টি ফ্রেঞ্চ ওপেন শিরোপা এবং ৩৬টি মাস্টার্স শিরোপাসহ ৬২টি ক্লে কোর্টে অর্জন। ক্লেতে তো তার টানা ৮১টি জয় তাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সাধে তো নাদালকে ক্লে কোর্টের রাজা বলা হয় না!

তপ্ত রোদে নাদালের ট্রেডমার্ক ড্রেস- লাল গেঞ্জি, সাদা হাফ প্যান্ট এবং মাথায় সাদা ব্যান্ড। অলিম্পিক গেমসে হাঙ্গেরির মার্টন ফুকসোভিকসের বিপক্ষে সার্ভ নিষ্পত্তি হতেই কোর্টের পাশে রাখা সাদা তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছে নিচ্ছিলেন। ড্রিংকসও নিচ্ছিলেন।

আবার সার্ভের আগে স্বভাবসুলভভাবে ব্যাট দিয়ে কেডসে বাড়িও দিতে দেখা গেলো। রোলাঁ গারোর কমপ্লেক্সে প্রতিটি রাউন্ড শেষ না হওয়া পর্যন্ত গ্যালারি থেকে কেউ চলেও যেতে পারেন না। এমনকি পিনপতন নীরবতা থাকে। সবার দৃষ্টি থাকে খেলার দিকে। সবাই যেন নাদালের প্রতিটি সার্ভ গোগ্রাসে গিলছিলেন!

দর্শকদের অনেকেই এসেছিলেন স্পেনের পতাকা নিয়ে। আবার এর নিচে নিজ দেশের পতাকাও ছিল। প্রতিটি রাউন্ডের ফাঁকে দর্শকদের কারও উচ্চস্বরে কথা শুনে গ্যালারিতে হাসির রোল ওঠে। আবার মিউজিকও বাজে। আর ফাঁকে ফাঁকে নাদাল, নাদাল কিংবা রাফা বলে স্লোগান তো ছিলই। অন্যরাও কোরাসে যুক্ত হচ্ছিলেন।

আর প্রতিটি সার্ভের নিষ্পত্তি হলে হাততালি তো রয়েছেই। ম্যাচ শেষে জয় নিশ্চিত হতেই সবাই যেন আনন্দে উন্মাতাল। নাদালের এগিয়ে যাওয়া দেখে উচ্ছ্বসিত।

২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে সোনা জিতেছিলেন স্প্যানিস টেনিস ‘রাজা’ নাদাল। এবার ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে আরও একবার স্মরণীয় হয়ে থাকার লড়াই।

ক্লে কোর্ট তার নিজের হাতের তালুর মতো চেনা। জয়ের রেকর্ড নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। জোকোভিচ-আলকারেজদের ছাড়িয়ে সোনার পদক আসবে কিনা, দর্শকরা আনন্দে ভাসবেন কিনা তার জন্য এখন অপেক্ষা! এরই মধ্যে দ্বিতীয় রাউন্ডে জোকোভিচের সঙ্গে লড়াই নিশ্চিত করে ফেলেছেন স্প্যানিশ তারকা।

রবিবার প্রথম রাউন্ডে মার্টন ফুকসোভিকসের মুখোমুখি হন নাদাল। ঊরুতে ব্যান্ডেজ বেঁধে রোলাঁ গাঁরোর প্রিয় কোর্টে নামেন ১৪ বারের ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ী। কষ্ট হলেও ৬-১, ৪-৬ ও ৬-৪ গেমে জিতে গেছেন ৮৩ নম্বর র‌্যাঙ্কিংধারী হাঙ্গেরিয়ানের বিপক্ষে।

২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে একমাত্র স্বর্ণপদক জেতেন নাদাল। রিও অলিম্পিকে পরে ডাবলসেও চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। আরেকটি পদক গলায় ঝুলাতে দ্বিতীয় রাউন্ডেই তাকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।