পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রশ্নপত্রে ব্যাপক গরমিল, সিবিআইয়ের চার্জশিটে বিস্ফোরক তথ্য

বাংলার একাধিক পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির মামলা নিয়ে তদন্ত করছে সিবিআই। এই দুর্নীতিতে তদন্ত করতে নেমে সিবিআই অফিসারদের চোখ কপালে উঠে যায়। কারণ রাজ্যের একাধিক পুরসভায় চার বছর আগে যে নিয়োগ করা হয়েছিল তার প্রশ্নপত্রেও মিলেছে বিস্তর গরমিল। প্রশ্নপত্র সাধারণত তৈরি করে বিশেষজ্ঞরা। সেখানে তাঁদের সাহায্য ছাড়াই তৈরি করা হয়েছিল পুরসভায় নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন। এই প্রশ্ন তৈরি করার জন্য একাধিক বইয়ের দোকান থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বই কিনে আনা হয়েছিল। তারপর প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। যার দায়িত্বে ছিল অয়ন শীলের সংস্থা এবিএস ইনফোজোন।

এই প্রশ্নপত্রকে সামনে রেখে হতো পরীক্ষা। তারপর চাকরি দেওয়ার নাম করে নেওয়া হতো টাকা। এই দাবি করেছে সিবিআই। পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এবার বিশেষ আদালতে ৩২ পাতার চার্জশিট জমা দিয়ে এই দাবিই করেছে সিবিআই। পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে ২০২৩ সালের দুর্গাপুজোর ঠিক আগে অয়ন শীলকে গ্রেফতার করে ইডি। পরে তাঁকে হেফাজতে নেয় সিবিআই। আদালত সূত্রে খবর, চার্জশিটে সিবিআই দাবি করেছে জেরায় অয়ন শীল এই সব তথ্য স্বীকার করেছেন। সল্টলেকের এবিএস ইনফোজোনের অফিসেই তৈরি করা হতো নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। রাজ্যের ১৭টি পুরসভায় ২০১৪ সালের পর থেকে অয়ন শীলের সংস্থার মাধ্যমেই পুরসভার নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে।

আরও পড়ুন:‌ বিজেপির ‘‌বাংলা ভাগ’‌ নিয়ে উত্তাল বিধানসভা, নিন্দাপ্রস্তাব আনতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস

এই অয়ন শীলের এক বান্ধবীর কথাও সামনে আসে তদন্তে। তিনি এই কাজে সাহায্যের হাত বাড়াতেন কিনা সেটা এখনও জানা যায়নি। তাছাড়া অয়ন শীলের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কয়েকজন নেতার যোগাযোগ ছিল দাবি করা হলেও তেমন প্রমাণ সিবিআই জোগাড় করতে পারেনি। তাই সেই তদন্ত জারি আছে। এভাবেই অয়ন শীল বিপুল টাকা রোজগার করেন বলে দাবি সিবিআইয়ের। তাই ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ সল্টলেকের ব্যবসায়ী অয়নের অফিসে তল্লাশি চালান ইডির অফিসাররা। সেখান থেকে উদ্ধার হয় পুরসভায় নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এবং একাধিক নথি। বেশ কয়েকটি পুরসভা এবং চেয়ারম্যানদের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছিল।

এই অয়ন শীলের সঙ্গে কয়েকজন ব্যবসায়ীর যোগ ছিল বলে জানতে পেরেছে সিবিআই কর্তারা। তাঁদের ভূমিকা কী সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির জাল অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তৃত বলে জানতে পেরেছেন সিবিআই অফিসাররা। তাছাড়া দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান পাচু রায়, এখনকার ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই দত্তকে বারবার তলব করেন সিবিআইয়ের অফিসাররা। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও পরীক্ষার বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান তাঁরা। এবার সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই তদন্তকারীরা তদন্ত প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সূত্রের খবর।