জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হতে পারে সন্ত্রাস দমন আইনে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা আইনেই আছে। সন্ত্রাস দমন আইনের ১৮ অনুচ্ছেদে নিষিদ্ধের একটা সুযোগ রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ চলছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলেই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। সেটাই এখন প্রক্রিয়াধীন আছে। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে আজই (বুধবার) প্রজ্ঞাপন হচ্ছে কিনা নিশ্চিত করতে পারছি না। তবে এটা প্রক্রিয়াধীন আছে।

বুধবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে সুশীল সমাজ ও ১৪ দলের ডিমান্ড রয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক ডিমান্ড আছে। সর্বশেষ যেসব ঘটনা ঘটেছে, এগুলোর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের যেসব সম্পর্ক রয়েছে, সবকিছু মিলিয়েই তাদের নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তটা আসছে।

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আজই (বুধবার) প্রজ্ঞাপন জারি হচ্ছে কিনা? জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি তো বলতে পারছি না।

নিষিদ্ধের প্রক্রিয়াটি কোন পর্যায়ে আছে– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছু যদি আপনারা এখনই জানতে চান, তাহলে তো আমি জানাতে পারবো না। প্রক্রিয়া চলছে। হলেই আপনারা জানতে পারবেন। কোন পর্যায়ে আছে সেসবের বিস্তারিত আমি দিতে পারবো না। তবে যেকোনও সময় সিদ্ধান্ত আসবে। তখন আমরা প্রজ্ঞাপন জারি করবো।

এ বিষয়ে বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমি সবসময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাই বিভিন্ন নির্দেশনার জন্য। সেখানে অনেক বিষয়ে আলাপ হয়েছে। এ বিষয়েও আলাপ হয়েছে।

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হলে পরিস্থিতির অবনতি হবে?

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হলে আবারও পরিস্থিতির অবনতি হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জামায়াত-শিবির তো এ অবস্থা তৈরি করেই রেখেছে। বর্তমান পরিস্থিতি তৈরির পেছনেও তাদের যথেষ্ট যোগসাজশ রয়েছে। না হয় ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের সবকিছু মেনে যাওয়ার পরও এই আন্দোলন থামছে না। এটা একটা সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। ছাত্ররা কোনোদিন এরকম সহিংসতায় লিপ্ত হতো না যদি তাদের পরামর্শদাতারা এসব পরামর্শ না দিতো।

তিনি বলেন, তারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। এত মানুষ হতাহত হয়েছে, সেটা কি শুধু পুলিশের গুলিতে হয়েছে। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন। আমরাও খোঁজ নিচ্ছি। প্রকাশ করবো কার গুলিতে কতজন নিহত ও আহত হয়েছেন। সব কিছুই তো ছাত্ররা করেনি। তাদের পেছনে থেকে যারা করেছে তারা হচ্ছে জামায়াত-শিবির, বিএনপি এবং বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিল। এটাই আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। সে জন্যই অনেক দিনের চাহিদা ছিল জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার, সেই প্রক্রিয়াই চলছে। তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণকে জানাতে হবে, সেটারই ব্যবস্থা আমরা করছি।

জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধিকে যা বলা হয়েছে

জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, তারা জানতে চেয়েছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আর কত সময় লাগতে পারে। আমরা জানিয়েছি, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। আমরা মনে করেছিলাম, খুব অল্প সময়ে এটা করতে পারবো, আর্মিও ব্যারাকে ফিরে যেতে পারবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে। তারা জানতে চেয়েছিলেন কয়েকজন কিশোরের মৃত্যু নিয়ে। আমরা একজনের কথা বলেছি, আমরা তার স্কুল থেকে জানার চেষ্টা করছি। তার বয়স সাড়ে সতেরো। কিন্তু সেই ছেলেটি যে অন্যায় কাজটি করেছে, সেটা খুবই জঘন্য, যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ সদস্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। তার যে কথোপকথন প্রকাশ হয়েছে সেটাতেই আমরা তাকে শনাক্ত করতে পেরেছি।

মন্ত্রী বলেন, পুলিশ হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখার জন্য সেখানে সে দড়ি ধরে টানতে ছিল। সে যার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল, তাকে সেটা জানানো হয়েছিল। অপর প্রান্ত থেকে তাকে সাহস দেওয়া হয়েছিল। এই কিশোরকে আমরা কোথায় নেবো সেই বিষয়ে আমরা জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধিকে প্রশ্ন করেছিলাম। আমাদের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাকে কিশোর সংশোধনাগারে রেখেছি। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যারা প্রাণ হারিয়েছেন, আমরা জানিয়েছি আমাদের প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করেছেন, হতাহতদের দেখতে গিয়েছেন। তাদের নগদ টাকাও সাহায্য করেছেন। পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনী ইচ্ছা করে কিছু করেনি। মানুষের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার জন্যই তারা গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছে। পুলিশ অনেক ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। আসল ব্যক্তিরা যারা সহিংসতা করেছে, আগুন দিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে, ইটপাটকেল মেরেছে, তারা পেছনে থেকে শিশু-কিশোরদের সামনে রেখেছিল। পুলিশ অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছিল। যখন বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল মারা হলো, গুলি করা হলো, তখন পুলিশ বাধ্য হয়ে যা করার করেছে। এতে হয়তো অনেকে আহত হয়েছে। এরপরও যখন থামেনি, তখন পুলিশ নন লেথাল আর্মস দিয়ে ফায়ার করতে বাধ্য হয়েছে। তখন আমরা কারফিউ দিতে বাধ্য হয়েছি। সেনাবাহিনী নামাতে বাধ্য হয়েছি। জানমাল রক্ষাতেই এটা করতে হয়েছে। এখানে যে শুধু ছাত্ররাই শহীদ হয়েছে তা নয়। এখানে পুলিশ, আনসার, র‌্যাবের সদস্য, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ হতাহত হয়েছেন। ছাত্রদের মধ্যে ছাত্রলীগের সদস্যও রয়েছে। যারা প্রাণ হারিয়েছেন সেখানে আওয়ামী লীগের লোকজনও শাহাদাতবরণ করেছেন, যুক্ত করেন মন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা আরেকটি বিষয় জানতে চেয়েছেন যে সেনাবাহিনী ‘ইউএন’ লেখা ভেহিক্যাল ব্যবহার করেছে। আমরা জানিয়েছি, এসব ভেহিক্যাল ফেরত আনা হয়েছিল, সেটা বের করেছিল, যখন এটা দেখা গেছে সেটা সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কোনও অপারেশন কার্যক্রম চালানো হয়নি। আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে আমরা কী কী করছি। সেগুলো তাদের জানিয়েছি কী করা হচ্ছে।