ডিবি থেকে ফিরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজত থেকে বের হয়ে আবারও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুরে ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নিজের ফেসবুক আইডিতে এ বিষয়ে জানান।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পান ছয় সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম, মো. সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মো. আবু বাকের মজুমদার, আসিফ মাহমুদ ও নুসরাত তাবাসসুম। তাদের মধ্যে হাসনাতসহ কয়েকজন সমন্বয়ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

বিকালে হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্টে লেখেন, ‘এই আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই মুক্ত নই। এই গণগ্রেফতার গণঘৃণার নামান্তর। আমাদের মুক্তি তখনই সম্পূর্ণ হবে, যখন এই আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়া শেষ ব্যক্তিটিও মুক্তি পাবেন। এই গণগ্রেফতার কেবল নিরপরাধ মানুষের অধিকার হরণ নয়, বরং আমাদের সমগ্র সমাজের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একটি নিষ্ঠুরতার প্রতিফলন। এটি মুক্তচিন্তা ও মানবাধিকারের প্রতি এক ভয়ানক আঘাত। আমাদের এই আন্দোলন শুধু ব্যক্তির মুক্তির জন্য নয়, বরং বৈষম্য, নিপীড়ন, গণগ্রেফতার এবং ছাত্র নির্যাতনের বিরুদ্ধে। এই আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়া শেষ ব্যক্তিটি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

এদিকে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম তার ফেসবুকে সরকার ও পুলিশকে উদ্দেশ করে দেওয়া পোস্টে লেখেন, ‘কথা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে কাউকে গ্রেফতার করবেন না, মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না। আপনারা কথা রাখেননি। আপনারা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর আঘাত করেছেন। সারা দেশে আমার স্কুল-কলেজের ভাইবোনদের ওপর লাঠিচার্জ করেছেন ৷ যাকে ইচ্ছা তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। আন্দোলনকারীকে খুঁজে না পেলে বাসা থেকে ভাইকে তুলে নিয়েছেন, বাবাকে হুমকি দিয়েছেন! মাশরুর তার উদাহরণ।’

তিনি আরও লেখেন, ‘যারা একটিবারের জন্যও এই আন্দোলনে এসেছে, তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারে না, গ্রেফতারের ভয়ে থাকে ৷ এমন অনেকে আছে, যাদের পরিবার এখনও তাদের খোঁজ পায়নি। এমন তো হওয়া উচিত ছিল না! কোথায় মহাখালীর সেতু ভবন আর কোথায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়! অথচ আপনারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে মহাখালীর সেতু ভবনে হামলার জন্য গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলেন। সঙ্গে আছে আসিফ মাহতাব স্যার, মাশরুরসহ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অসংখ্য শিক্ষার্থী।’

‘ছয় দিনের ডিবি হেফাজত দিয়ে ছয় জনকে আটকে রাখা যায় কিন্তু এই বাংলাদেশের পুরো তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে আটকে রাখবেন? দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছেন প্রতিনিয়ত, সেগুলো কীভাবে নিবৃত করবেন?’

সারজিস লেখেন, ‘পুলিশ ভাইদের উদ্দেশে বলি, এ দেশের মানুষের ক্ষোভ আপনাদের ওপর নয়, পুলিশের ওপর নয়। এই ক্ষোভ আপনার গায়ের ওই পোশাকটার ওপর। যে পোশাকটাকে ইউজ করে বছরের পর বছর আপনাদের দিয়ে এ দেশের অসংখ্য মানুষকে দমন-পীড়ন করা হয়েছে, অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, জেল আর আদালতের প্রাঙ্গণে চক্কর কাটানো হয়েছে, সেই পোশাকটার ওপর। ওই পোশাকটা ছেড়ে আসুন আমাদের সঙ্গে, বুকে টেনে নেবো।’

‘এ পথ যেহেতু সত্যের পথ, ন্যায়ের পথ, তাই যেকোনও কিছু মোকাবিলা করতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নই ৷ যত দিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে; গণগ্রেফতার, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে; ততদিন এ লড়াই চলবে।’

আসিফ মাহমুদ লিখেছেন, ‘বেআইনিভাবে আটক রাখা থেকে মুক্তির দাবিতে গত মঙ্গলবার রাত থেকে ৩২ ঘণ্টা আমরণ অনশনে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, নাহিদ ইসলাম ও আবু বাকের মজুমদার। এ সময় তারা কোনও প্রকার খাবার, পানি, ও চিকিৎসা নেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সমন্বয়কদের অনশনের মুখে আজ দুপুর ১টার দিকে ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

নুসরাত তাবাসসুমের ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন তার ফুফাতো বোন মেহের আফরোজ। নুসরাতের ফেসবুক থেকে তিনি লিখেছেন, ‘নুসরাত তাবাসসুমকে ডিবি অফিস থেকে ফেরত পেয়েছি আমরা। ৩২ ঘণ্টা অনশনের ফলে শারীরিক মানসিকভাবে নুসরাত দুর্বল। সে বর্তমানে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করার অবস্থায় নেই। সুস্থ-স্বাভাবিক হয়ে নুসরাত তাবাসসুম আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। সব প্রতিবাদী কণ্ঠকে আপনাদের দোয়ায় রাখবেন। মেহের আফরোজ, নুসরাত তাবাসসুমের ফুফাতো বোন।’

তবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সমন্বয়ক নাহিদ ও আবু বাকের এখনও তাদের প্রতিক্রিয়া জানাননি।