ছয় সমন্বয়কের ‘পক্ষ থেকে’ বিবৃতি, দুই জনের ফেসবুক আইডি ‘উধাও’

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজত থেকে মুক্ত হওয়া মো. নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুম ও আবু বাকের মজুমদারের নামে আজ শুক্রবার (২ আগস্ট) একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার সাংবাদিকদের নিয়ে তাদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপে এই বিবৃতি দেন।  

এদিকে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ডিবি অফিস থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর বিকালে নিজেদের মতামত জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। এর ঘণ্টা খানেক পর দুজনের আইডিই আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে তাদের নামে নতুন আইডি দেখা যাচ্ছে অনেক। এগুলোকে ফেক বলে দাবি করছেন বাকি সমন্বয়করা।

হোয়াটস্যাপ গ্রুপে ডিলিট-রিমুভ

শুক্রবার (২ আগস্ট) জুমার নামাজের পরের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের আপডেট দেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের নিয়ে খোলা হোয়াটস্যাপ গ্রুপে মেসেজ দেন রিফাত রশিদ। পরে সেটির বিষয়ে কিছু জানেন না এমন দাবি করে গ্রুপে মেসেজ দেওয়া হয় সারজিস আলমের নম্বর থেকে। এর কিছুক্ষণ পরেই তার মেসেজ ডিলিট করে দেন আরেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের। তার নম্বর থেকে এরপর আবারও একই মেসেজ দেওয়া হয়। এটি আবার ডিলিট করেন ফারহান নামের একজন। তারপর তাকে গ্রুপ এমডিন থেকেও রিমুভ করা হয়। দাবি করা হচ্ছে শরজিসের ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে নেই।

ছয় জনের পক্ষে অন্যজনের বিবৃতি

আজ সকালে কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার ডিবির হেফাজত থেকে মুক্ত ছয় জনের পক্ষে একটি বিবৃতি দেন। এতে বলা হয়, গত ২৬ জুলাই ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে ডিবি পুলিশ জোর করে মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে যায়। মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় ছিল বলে বর্ণনা দিয়ে বাকের বলেন, ২৭ জুলাই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে সায়েন্সল্যাব থেকে জোর করে ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে আসা হয়।  ২৮ জুলাই সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে ভোররাতে বাসা থেকে জোর করে ডিবি অফিসে নিয়ে আসা হয়।

মূলত আন্দোলন ও নেতৃত্বকে ছত্রভঙ্গ করতেই ১৯ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে দাবি করে বিবৃতিটিতে বলা হয়, এরই ধারাবাহিকতায় ‘নিরাপত্তা’র নামে ছয় সমন্বয়ককে সাতদিন ধরে ডিবি হেফাজতে জোর করে আটকে রাখা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবিপ্রধান নিরাপত্তার কথা বললেও আমাদের আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যই ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছিল। আমরা গুম, গ্রেফতার ও নির্যাতন থেকে নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা চেয়েছিলাম; আমরা আমাদের মত প্রকাশের অধিকারের নিশ্চয়তা চেয়েছিলাম। কিন্তু অসাংবিধানিক ও আইনবহির্ভূতভাবে আমাদেরকে ডিবি হেফাজতে আটকে রাখা হয়। প্রথমে নিরাপত্তার কথা বললেও পরে আদালতের কথা বলা হয়। আদালতের আদেশ ছাড়া নাকি আমাদের ছাড়া যাবে না।

আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়ককের ভিডিও স্টেটমেন্টটি তারা স্বেচ্ছায় দেননি­­- দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনও সিদ্ধান্ত ডিবি অফিস থেকে আসতে পারে না। সারা দেশের সব সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে না। ডিবি অফিসে আমাদের জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়। আমাদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিবারকে ডেকে ১৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং মিডিয়ায় মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হয়। আমাদের শিক্ষকরা দেখা করতে আসলে, দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আন্দোলনকারীদের আটকে রাখা হয়েছিল দাবি করে বাকের বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ছাত্র-নাগরিকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকার এখনও শিক্ষার্থীদের ওপর দমননীতি অব্যাহত রেখেছে এবং সারা দেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করছে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করছে। ছাত্র-নাগরিক হত্যার বিচার ও আটককৃত নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।