প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে বেতন বৈষম্যের অভিযোগ, কলকাতা হাইকোর্টের বড় রায়

প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য ব্রিজ কোর্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। তবে তা এক দশক আগে। এই ব্রিজ কোর্স করতে পারবেন বিএড উত্তীর্ণ প্রাথমিক শিক্ষকরা। যেটার দায়িত্ব ছিল সর্বভারতীয় নিয়ামক সংস্থা এনসিটিই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বাংলায় এতদিনেও এই কোর্স চালু করতে পারেনি পর্ষদ। রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এই কোর্স চালুর বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি। এই নিয়ে জোরাল অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, কয়েকজন প্রাথমিক শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে মামলা করেন। তার জেরে কলকাতা হাইকোর্ট ব্রিজ কোর্স এতদিনেও কেন চালু হল না?‌ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। ফলে তৈরি হল অতিরিক্ত চাপ।

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে এমনিতেই ব্যাকফুটে রাজ্য সরকার। কারণ এই নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। তা নিয়ে মামলা হয় এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে। এই আবহে এই কোর্সের বাস্তব কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ এই কোর্স না করার পরও কয়েক হাজার বিএড উত্তীর্ণ প্রাথমিক শিক্ষককে রাজ্য সরকার এ–ক্যাটেগরির শিক্ষক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তার ফলে উচ্চ স্কেলে বেতন দেওয়া হচ্ছে। এটাই বৈষম্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারপরই বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি শম্পা দত্ত পালের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, ব্রিজ কোর্স না করা সত্ত্বেও যদি রাজ্য সরকার ৩,৪৪৬ জনকে এ–স্কেলে বেতন দিতে পারে, তাহলে মামলাকারীরা বঞ্চিত হতে পারে না।

আরও পড়ুন:‌ অ্যাডেড এরিয়ায় বাড়ি নির্মাণ করতে লাগবে সার্ভেয়ার বিভাগের ছাড়পত্র, নয়া নিয়ম কলকাতা পুরসভার

এখানেই শেষ নয়, যাঁরা এখন এ–ক্যাটেগরির বেতন পাচ্ছেন তাঁদের পাওনা নিয়ে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যাঁরা মামলা করেছেন তাঁদেরও এ–ক্যাটেগরির স্কেলে বেতন দেওয়া হোক। এই নির্দেশই দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আসলে এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন হবে?‌ সেই প্রশ্ন মামলাকারীদের। এই এ–ক্যাটেগরির বেতন পেতে একদল বিএড উত্তীর্ণ প্রাথমিক শিক্ষকরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, কিছু শিক্ষক তাঁদের সমান হওয়া সত্ত্বেও রাজ্য সরকার তাঁদের উচ্চ হারে বেতন দিচ্ছে। তাহলে তাঁরা কেন পাবেন না?‌ তাঁদের অপরাধ কী?‌ রাজ্য সরকার জবাবে আদালতে স্বীকার করে, প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষক ব্রিজ কোর্স না করেও উচ্চ হারে বেতন পাচ্ছেন।

এখন মহা ফাঁপরে পড়েছে রাজ্য সরকার। কারণ যাঁরা উচ্চ হারে বেতন পাচ্ছেন তাঁদের বেতন কমানো যাবে না। বেতন কমালে তাঁরা আবার আদালতে হাজির হবেন। আর এই মামলাকারীদের বেতন বাড়ালে সরকারের তহবিলে চাপ পড়বে। অথচ কলকাতা হাইকোর্ট বেতনে বৈষম্য না করার পক্ষে নির্দেশ দিয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্টের বক্তব্য, যাঁরা এতদিন উচ্চ হারে বেতন পাচ্ছেন, তাঁদের সেই বেতন রাজ্য ফেরাবে কিনা সেটা তাদেরই ঠিক করতে হবে। কিন্তু তার জন্য একই যোগ্যতা আছে যাঁদের তাঁদের বঞ্চিত করা যাবে না। সুতরাং মামলাকারীদের এ–ক্যাটেগরির শিক্ষক ধরে নিয়ে বেতন দিতে হবে। চাপ এখানেই।