সংঘর্ষে কাউন্সিলর-চেয়ারম্যানসহ আ.লীগের ২৩ নেতাকর্মী নিহত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘অসহযোগ আন্দোলন’ ঘিরে সারা দেশে সংঘর্ষ ও সহিংসতায় পুলিশসহ অন্তত ৯৫ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে কাউন্সিলর-চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের ২৩ নেতাকর্মী নিহত হন।

সিরাজগঞ্জে পাঁচ জন

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া বাজারে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে পাঁচ আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন। তারা হলেন ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার লিটন (৫৫), তার ভাই যুবলীগ নেতা গোলাম হাসনাত টিটো (৪০), রায়গঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ইলিয়াস (৪০), সাধারণ সম্পাদক আলামিন হোসেন (৩৭), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম (৪০)। রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

লক্ষ্মীপুরে ছয় জন

লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনকারী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ছয় নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক। রবিবার দিনভর শহরে বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্যে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে জানা গেছে। তবে প্রাথমিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। আন্দোলনকারীরা লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নূর উদ্দিন চৌধুরী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুন নবী সোহেলের বাসায় অগ্নিসংযোগ করেছে।

রংপুরে তিন জন

রংপুর নগরীতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হারাধন রায়সহ তিন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। নিহত বাকি দুজন হলেন যুবলীগ কর্মী খসরু, তার বাড়ি রংপুর নগরীর গুড়াতিপাড়ায় এবং যুবলীগ কর্মী মাসুম (৩১)। রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাবিবুল হাসান রুমি এ তথ্য জানিয়েছেন।

নরসিংদীতে ছয় জন 

নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকর্মী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রবিবার দুপুরে মাধবদী বাজার বড় মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মাধবদীর পৌর মেয়র মোশারফ হোসেন মানিক। 

জানা যায়, দুপুর দেড়টার দিকে আন্দোলনকারী ও মাধবদীর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে তা গোলাগুলিতে রূপ নেয়। হঠাৎ আওয়ামী সমর্থকদের গুলি উপেক্ষা করে তাদের ওপর চড়াও হলে আওয়ামী সমর্থকরা দৌড়ে পালাতে থাকে। এ সময় ছয় জন আওয়ামী নেতাকর্মী দৌড়ে মাধবদী বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম দিকের বড় মসজিদে আশ্রয় নেন। আন্দোলনকারীরা মসজিদ থেকে বের করে এনে মসজিদের সামনেই এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ঘটনাস্থলেই ছয় জনের মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।

নিহতরা হলেন চরদিগলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৪০), নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন (৩৮), জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া ওরফে নাতি মনির (৪২), শ্রমিক লীগ নেতা আনিছুর রহমান সোহেল (৪০), মাধবদী পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নওশের (৪০) ও আরেক যুবলীগ কর্মী (৩৫)।

কিশোরগঞ্জে দুজন

কিশোরগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের সময় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসায় আগুন দিলে পুড়ে অঞ্জনা বেগম (৩২) নামে এক নারী ও তার সাত বছরের কন্যাশিশু মারা গেছে। ওই নেতার বাসার কাছে যুবলীগ নেতা মবিনকেও (৩৮) হাত-পা বেঁধে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, টিটুর পাশের বাসার পেছন থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সদর উপজেলার কর্শ্বাকড়িয়াল ইউনিয়ন যুবলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মবিনের লাশও উদ্ধার করা হয়। তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

ঢাকায় একজন

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা আনোয়ারুল ইসলাম (৬২) নিহত হয়েছেন। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন।