Bangladesh Situation Update: এবার বাংলাদেশে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক, ঢাকায় মিটিং, দাবি একটাই, শেখ হাসিনার পদত্যাগ

রফিকুল ইসলাম সবুজ

এবার বাংলাদেশে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটির সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম এই ঘোষণা করেছেন। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের পদত্যাগ করতে হবে। রোববার থেকে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও করেছেন তিনি।

এছাড়া ২৪ ঘণ্টার ভেতর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল খুলে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে। সেনাবাহিনীসহ নিরাপত্তাবাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, এই সরকারকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। আপনারা সরকারকে সমর্থন না দিয়ে জনগণকে সমর্থন দিন।

এর আগে শনিবার বেলা ১১টার পর থেকেই আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় আসতে থাকেন। দুপুর আড়াইটার পর বৃষ্টি শুরু হলেও ছাতা মাথায় দিয়ে অবস্থানে অনড় থাকেন আন্দোলনকারীরা। এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণি- ও পেশার লোকজন আসতে শুরু করেন।

শহর থেকে দলে দলে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহিদ মিনারে যোগ দেন তারা। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নাহিদ ইসলাম মাইকে সমবেত মানুষের উদ্দেশে বলেন, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এক দফা দাবির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। এক দফাটি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ এই সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদের বিলোপ। 

নাহিদ আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে আমরা খুব দ্রুতই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের জন্য সর্বস্তরের নাগরিক, ছাত্রসংগঠন ও সব পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে মিলে সম্মিলিত মোর্চা ঘোষণা করব। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা আমরা সবার সামনে হাজির করব। শুধু শেখ হাসিনা নয়, মন্ত্রিসভাসহ পুরো সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ করতে হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই, এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে চাই, যেখানে আর কখনো কোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্র-ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে। স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থান শুরু হয়ে গেছে, তার সঙ্গে মানুষকে যোগ দেওয়া এবং পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান নাহিদ। তিনি কাল থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণাটিও তুলে ধরেন।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন পড়ুয়ারা। ১৬ জুলাই সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যু হয়। এরপর আন্দোলন আরও গতি পায়। পরবর্তীতে সংঘর্ষ ও সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২১৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। সর্বশেষ গত শুক্রবার আন্দোলনকারিদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক পুলিশকর্মী ও একজন শ্রমিক মারা যান। শনিবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামি লীগ কর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় অন্তত ২০ আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ছাত্রদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে বাংলাদেশের বাম জোট, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হতাহতের ঘটনায় ৯ দফা দাবি দিয়েছিল। এবার এক দফা দাবি তুলে ধরা হলো। আজ শহদ মিনারে সামনের সারিতে অন্তত ছয়জন সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও আবদুল কাদের। তাঁদের মধ্যে নাহিদসহ তিনজন বক্তব্য দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে। রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।

এর আগে শনিবার সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই। তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না। তারা যেকোনও সময় আসতে পারে। দরকার হলে তারা তাদের অভিভাবকদের নিয়েও আসতে পারে। গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, আন্দোলনকারীরা চাইলে আমি এখনও আলোচনায় রাজি। 

এই সময় প্রধানমন্ত্রী রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনায় যে পুলিশ কর্মী জড়িত তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি আটক সাধারণ ছাত্রদের মুক্ত করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, দলের পক্ষ থেকে তিনজনকে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম ও মাহবুব উল আলম হানিফ।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকেও আলোচনায় থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এখন আর আলোচনার সুযোগ নেই। সিদ্ধান্ত আসবে রাজপথ থেকে।