Bangladesh Protest: কেমন আছে ওপার বাংলা? ‘৩৬ জুলাই’-এর পরদিন ফোনে HT বাংলা শুনল সাধারণের কণ্ঠস্বর

‘৩৬ জুলাই’। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তারিখের একটি হয়ে রইল। আবার স্বাধীনতা প্রত্যক্ষ করল এই দেশ। সংরক্ষণের বিরোধিতা করে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত ফেলে দিল শেখ হাসিনার সরকারকে। পদত্যাগ করে দেশছাড়া হলেন হাসিনা।

এই ঘটনার পর থেকেই নানা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। তার মধ্যে এক দিকে যেমন রয়েছে গণভবন থেকে জিনিসপত্র চুরির ছবি, তেমনই আছে দেশের যুবসম্প্রদায়ের এগিয়ে এসে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর থেকে ধর্মীয়স্থান রক্ষার ছবি। কিন্তু সাধারণ মানুষ কী বলছেন? সকালে হোয়াটসঅ্যাপ কলে বাংলাদেশের কিছু সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করল HT বাংলা। কী বলছেন তাঁরা।

HT বাংলা: কেমন আছেন? নিরাপদে আছেন তো? বাড়ির মানুষ সকলে ঠিক আছেন?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ১ (পুরুষ): আমরা চট্টগ্রামে আছি। এখনও পর্যন্ত আমরা ঠিকই আছি। নিরাপদেই আছি। দেশের ভিতরে অচলাবস্থা রয়েছে। সেটা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। কিন্তু ভয়ের কোনও কারণ দেখছি না।

HT বাংলা: এত দিন ধরে যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁরা ক্ষমতা থেকে সরে গিয়েছেন। তাঁদের সমর্থক তো নেহাত কম নয়। কেমন আছেন তাঁরা?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ১ (পুরুষ): হ্যাঁ, আওয়ামি লিগের সমর্থক তো প্রচুর। যাঁরা নেতৃত্ব স্থানীয়, তাঁদের অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন। কিন্তু সেভাবে আক্রমণ কারও উপর হয়েছে কি না, তা জানা নেই।

HT বাংলা: আর সংখ্যালঘুরা?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ১ (পুরুষ): কিছু কিছু এলাকায় তাঁদের উপর হামলা হয়েছে শুনেছি। কিন্তু কতটা কী সমস্যায় পড়েছেন, তা বলতে পারব না।

একদিকে যখন এই কথোপকথোন চলছে, ঠিক তখনই HT বাংলার আর এক সাংবাদিক ফোনে যোগাযোগ করলেন, ঢাকার এক পরিচিতের সঙ্গে। ঘটনাচক্রে ঢাকার সেই মানুষটিও একজন সাংবাদিক। কী বলছেন তিনি?

HT বাংলা: পরিস্থিতি কেমন ওখানে?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ২ (পুরুষ): আমরা ঢাকার একটা ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকি। এখানে বেশির ভাগ মানুষই (বলতে গেলে সকলেই) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। আমাদের বাড়িতে কেউ কোনও হামলা চালায়নি। আমরা বাড়ির ভিতর কাউকে ঢুকতেও দিইনি। ফলে প্রত্যক্ষ আঁচ আমাদের উপর কিছু এসেছে, তা বলা যাবে না।

HT বাংলা: আর পরোক্ষ আঁচ?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ২ (পুরুষ): তা এসেছে। আমরা সকলেই খুব ভয়ে আছি। নিজেদের নিয়ে তো বটেই। আমাদের আত্মীয়দের নিয়েও। কারণ তাঁদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

HT বাংলা: কোথায় থাকেন তাঁরা?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ২ (পুরুষ): বেশির ভাগই বরিষালে। সেখানকার কোনও খবর পাচ্ছি না। হয়তো ফোনের নেটওয়ার্কের সমস্যা। কিন্তু তবু মন উদ্বেগে ভরে রয়েছে।

ইতিমধ্যেই ফোনে যোগাযোগ করা গেল আরও একজনের সঙ্গে। চট্টগ্রামের বাসিন্দা। কী বলছেন তিনি।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ৩ (মহিলা): আমরা আবাসিক এলাকায় থাকি। এসব জায়গায় বিশেষ প্রভাব পড়েনি। তবু কাছাকাছির মধ্যে সংখ্যালঘুদের বেশ কিছু পাড়া রয়েছে। সেখানে ব্যাপক মাত্রায় ভাঙচুর হয়েছে বলেই শুনেছি।

HT বাংলা: গতকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে দেশের যুব সম্প্রদায় সংখ্যালঘুদের বাঁচানো এবং তাঁদের ধর্মস্থান রক্ষা করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছেন। আপনাদের এলাকা এমন কিছু দেখেছেন?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ৩ (মহিলা): তেমন কিছু তো দেখিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দেখেছি ঠিকই। কিন্তু যাঁদের এলাকায় ভাঙচুর হয়েছে, তাঁদের থেকে তেমন কোনও খবর পাইনি। হাজারি গলিতেও যেমন প্রচুর ভাঙচুর হয়েছে বলে শুনছি।

HT বাংলা: এখনও কি তেমনই চলছে?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ৩ (মহিলা): না, এখন পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়েছে বলেই শুনছি। যা হওয়ার তা একযোগে সারা দেশে বয়েছে বলেই শুনেছি।

এর পরে দেশের ভবিষ্যৎ কী? সেটি নিয়ে কী ভাবছেন এই সব মানুষ?

HT বাংলা: দেশের শাসনভার এর পরে কাদের হাতে থাকবে বলে মনে হয়? ছাত্ররা কতটা দায়িত্ব নেবে বলে মনে করেন আপনি?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ১ (পুরুষ): ছাত্রদের মধ্যে থেকে ছয় জনের নাম খুব বেশি করে উঠে এসেছে এই সময়ে। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, যেহেতু দ্বিতীয় কোনও শক্তি এর মধ্যে উঠে আসেনি, তাই শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা বিএনপি’র হাতেই যাবে। গণমাধ্যমে তারেখ জিয়ার ভিডিয়ো বার্তা প্রচার হচ্ছে। খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ৩ (মহিলা): যদিও ছাত্ররা বলছেন, তাঁরা বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চান না, কিন্তু অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, এটা শেষ পর্যন্ত বিএনপি’র হাতেই যাবে।

HT বাংলা: এপার বাংলা থেকে অনেকেই ওপার বাংলার আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা ব্যক্ত করেছেন? সেটা ওখানকার মানুষ কীভাবে নিচ্ছেন?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ১ (পুরুষ): এই খবর আমাদের কাছে বিশেষ নেই। কলকাতায় কেউ যে এদিককার মানুষের প্রতি সহমর্মী এমন কথা আমাদের কানে আসেনি।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ২ (পুরুষ): এখানে বরং গুজব ছড়িয়েছে, হাসিনার সঙ্গে যেহেতু মোদী সরকারের সম্পর্ক ভালো, তাই র’ বাংলাদেশে চলে এসেছে, ভারতীয় সেনা চলে এসেছে। গতকাল রাত থেকেই এমন কথা শোনা যাচ্ছিল।

HT বাংলা: একটা কথা এখানে শোনা যাচ্ছে, এই আন্দোলনের পিছনে জামাতের ভূমিকা রয়েছে। মানুষ কি জামাতের পক্ষে?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ১ (পুরুষ): দেশে ক্ষমতা বিস্তারের জন্য আওয়ামি লিগের অনেকেই এক সময়ে জামাতিদের সাহায্য নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, জামাতিরা আওয়ামি লিগের মধ্যে ঢুকেও পড়েছিলেন অনেকে। তাঁদের অস্তিত্ব তো ভালোই আছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ৩ (মহিলা): দেশে ধর্মবিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা তো অনেকটাই। তাঁদের মনে জামাতের প্রতি একটা ‘সফট কর্নার’ তো আছেই। এত দিন প্রকাশ্যে সমর্থন না করলেও, এখন তাঁরা প্রকাশ্যে সেটাও বলছেন। আর ক্ষমতায় বিএনপি থাকা মানেও তো জামাত থাকা। কারণ দুটো দলের সম্পর্ক খুবই মজবুত।

HT বাংলা: এই পরিস্থিতিতে আর একটি নাম বার বার উঠে এসেছে। বক্তা এবং ধর্ম প্রচারক মিজানুর রহমান আজহারি। অনেকেই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান। এটি কি ঠিক?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ২ (পুরুষ): অনেকে দেখতে চান, এটা যেমন ঠিক। তেমনই এটাও ঠিক, এই শ্রেণির মানুষ হলেন বাংলাদেশের আর্থসামাজিক স্তরে পিছিয়ে পড়া মানুষ। যাঁরা একেবারেই প্রগতিশীল নন, তাঁদেরই এটা ভাবনা। এঁরা সংখ্যায় বিপুল, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এখনই এমন সম্ভাবনা কম।

HT বাংলা: কিছু নামজাদা মানুষ এই আন্দোলনকে সমর্থন করেননি। তাঁদের মধ্যে হুমায়ুন আহমেদের ভাই সাহিত্যিক জাফর ইকবালও রয়েছেন। তাঁরা কতটা নিরাপদ বর্তমান পরিস্থিতিতে?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ৩ (মহিলা): তাঁদের প্রাণহানীর আশঙ্কা আছে। বিশেষ করে আওয়ামি লিগের সরকারের পক্ষে যে সব বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন, তাঁরা নিরাপদ নন। তাঁদের অনেকের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

HT বাংলা: আন্দোলন শুরুর সময়ে কি এমন পরিণতির কথাই সকলে ভেবেছিলেন?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ১ (পুরুষ): হাসিনার সরকারের উপরে রাগ তো অনেক দিনের। ফলে আজ না হোক কাল এই ঘটনা ঘটতই। আমার মনে হয়, যে সব ছাত্ররা এই আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তাঁরা হয়তো এমন পরিস্থিতির কথা তখন ভাবেননি। অনেককেই দেখছি এখন স্ট্যাটাস দিতে, ‘এই স্বাধীনতা চাইনি’। তবে সমন্বয়করা বোধহয় এটা ভেবেছিলেন। তাঁরা হয়তো, সবটাই জানতেন।

HT বাংলা: গতকাল বেশ কিছু সম্পত্তি ভাঙচুর হয়েছে। এটা নিয়ে সাধারণ মানুষ কী বলছেন?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ২ (পুরুষ): বেশির ভাগের প্রতিক্রিয়া হল— একটা সরকারের যখন পতন হয়েছে, তখন কিছু অরাজকতা তো হবেই। এটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামালে চলবে না। শেখ মুজিবের মূর্তি ভাঙা নিয়েও সেটাই বলছেন সকলে। গণভবনে ভাঙাভাঙি নিয়েও একই মত।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ৩ (মহিলা): বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চেহারা হয়তো এটার ফলে বেশ কিছুটা বদলে যাবে। তার আশঙ্কা অনেকে করছেন। তবে তাঁদের সংখ্যা হাতেগোনা। কিন্তু হাসিনার উপরে মানুষ এতই ক্ষুব্ধ যে, এগুলিকে সহজে জাস্টিফাই করা যাচ্ছে নিজের কাছেও।

HT বাংলা: গতকাল অনেকগুলি ভিডিয়োতেই দেখা গিয়েছে, বহু পুরুষ ক্যামেরার সামনে জোর দিয়ে বলছেন, ‘এই দেশ কোনও মহিলার পক্ষে চালানো সম্ভব নয়। এটার দায়িত্ব দিতে হবে কোনও পুরুষকেই’। এই বিষয়টি কতটা কাজ করেছে বাংলাদেশে?

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি ৩ (মহিলা): এই চিন্তাটা কাদের? এটা হল সেই সব মানুষের ভাবনা, যাঁরা আজহারিকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চায়। এই শ্রেণিটা বিরাট, তাতে সন্দেহ নেই। এই শ্রেণিটাই জামাত।

এসব কথা বলতে বলতেই বেশ কিছুটা সময় কেটে গেল। একদিকে বিজয় উল্লাস, অন্যদিকে উদ্বেগের বাংলাদেশে আর একটা বেলা বাড়ল। এপার বাংলা থেকে করা প্রশ্নগুলি সেখানে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হলেও, ওপারের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সব মানুষের বলা কথায়, তার উত্তর খোঁজা ৩৬ জুলাইয়ের পরের দিনে দাঁড়িয়ে বেশ কঠিন। ফোনের ওপারের কথাগুলি তাই আসলে উত্তর নয়, প্রশ্নের উত্তরে সেগুলিও আরও কিছু নতুন প্রশ্ন। যার উত্তর দেওয়ার দায় আপাতত সময় ছাড়া আর কারও নেই।