ফ্রান্সের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ছাপিয়ে সোনা জিতলো স্পেন

১৯৯২ সালে বার্সেলোনায় ঘরের মাঠে অলিম্পিকের পুরুষ ফুটবলে প্রথম সোনা জিতেছিল স্পেন। গত বছর সুযোগ এসেছিল দ্বিতীয়বার এই সাফল্য পাওয়ার। কিন্তু ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হার মানতে হয়েছিল। দুর্দান্ত ফুটবলের প্রদর্শনী করে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠে সেই আক্ষেপ এবার ঘুচালো লা রোহারা। তাও আবার ফ্রান্সকে তাদের মাটিতে হারিয়ে ৩২ বছর পর অলিম্পিকের সোনা জিতলো স্পেন। ফরাসিদের চমৎকার প্রত্যাবর্তন ছাপিয়ে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে বর্তমান ইউরোপ চ্যাম্পিয়নরা জিতলো ৫-৩ গোলে।

মিলট ১১ মিনিটে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন। বক্সের মধ্যে এক স্প্যানিশ ডিফেন্ডারের দুর্বল ক্লিয়ারেন্সের সুযোগ নিয়ে ভুল করেননি তিনি। স্পেনের কিপার বলে হাত লাগালেও থামাতে পারেননি।

পরের মিনিটে ওলিসে বক্সের মধ্যে খুঁজে পান মিলটকে। ফরাসি গোলদাতা দ্রুত বল বাড়ান। সময়মতো বলে পা লাগাতে না পারায় স্বাগতিকরা এগিয়ে যেতে পারেনি।

ফারমিন লোপেজ স্পেনকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখান। ১৮ মিনিটে বায়েনার চতুর পাসে বক্সের মধ্যে থেকে নিচু কোনাকুনি শটে জাল কাঁপান তিনি। সাত মিনিট পর নিজের দ্বিতীয় গোলের দেখা পান লোপেজ। রুইজের শট ফরাসি কিপার রেস্তেস ক্লিয়ার করতে পারেননি। বল পড়ে লোপেজের সামনে। সহজেই জালে বল জড়ান তিনি। এটি ছিল প্যারিস অলিম্পিকে তার ষষ্ঠ গোল।

২৮ মিনিটে বায়েনা চোখ ধাঁধানো গোল করেন। ফ্রি কিক থেকে তার বাঁকানো শট ফরাসি কিপারকে অসহায় বানিয়ে জালে জড়ায়। ৪২ মিনিটে রেস্তেস পা বাড়িয়ে মিরান্দার শট ঠেকিয়ে স্পেনের ব্যবধান বাড়তে দেননি।প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে স্পেন কিপার তেনাস ফিরিয়ে দেন মাতেতার হেড। তাতে ৩-১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় স্প্যানিশরা।

৫২ মিনিটে ফ্রান্স কোচ থিয়েরি অঁরির দুটি পরিবর্তন আনেন। আকলিওচে ও কালিমুয়েন্দোকে মাঠে নামান। এই দুজন ম্যাচ পাল্টে দেন। তার আগে ৫৮ মিনিটে কোনের হেড ক্রসবারে আঘাত করে ফরাসিদের হতাশায় ভাসায়।

শেষ ১৫ মিনিটে যেন ছন্দ হারায় স্পেন। ৭৩ মিনিটে টেনাসের দারুণ সেভে রক্ষা পায় তারা। পেনাল্টি এরিয়া থেকে কোনের শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন স্পেন কিপার।

ছয় মিনিট পর ওলিসের ফ্রি কিকে বল পেয়ে গোল শোধ দেন আকলিওচে। নিস্তব্ধ ফরাসি দর্শকরা গর্জে ওঠে।

ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিট পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। মিরান্ডার রাগবির মতো ট্যাকলে ফরাসি ফরোয়ার্ড কালিমুয়েন্দো বক্সের মধ্যে পড়ে যান। মাতেতা দায়িত্ব নেন এবং বাঁ দিক দিয়ে নিচু শটে জাল কাঁপান। পাঁচ মিনিট পর তুরিয়েন্তেসের বাঁ পায়ের শট ক্রসবারে লেগে হতাশ করে স্পেনকে।

ফ্রান্সের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়।

বদলি খেলোয়াড় কামেল্লো ১০০ মিনিটে স্পেনকে লিড এনে দেন। গোমেজের পাসে বক্সের মধ্যে থেকে গোলকিপারকে পরাস্ত করেন তিনি। নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে পার্ক দে প্রিন্সেসের দর্শকরা।

ওই গোলে একটি রেকর্ডও তৈরি হয়। অলিম্পিক ইতিহাসে পুরুষ ফুটবলের ফাইনালে সর্বোচ্চ গোল হয়ে গেলো। এর আগে ১৯১২ সালে গ্রেট ব্রিটেন ৪-২ গোলে ডেনমার্ককে হারায়।

১০৭ মিনিটে গোমেজ ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে ৩০ গজ দূর থেকে শট নেন। রেস্তেস বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ প্রচেষ্টা রুখে দেন।

কামেল্লো আরেকবার জালে বল জড়িয়ে স্পেনের জয় সুনিশ্চিত করেন। শেষ অর্ধের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে কিপার তেনাস বল থ্রো করেন। কামেল্লো তার মার্কারকে ছাপিয়ে গোলকিপারকে পরাস্ত করেন।

উয়েফা নেশনস লিগ জেতার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৯ ও সিনিয়র দল ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবার অলিম্পিকেও সোনা জিতে মৌসুম স্মরণীয় করে রাখলো তারা। আর ১৯৮৪ সালে প্রথম স্বর্ণ জয়ের ৪০ বছর পর ফ্রান্স পেলো রৌপ্য। বৃহস্পতিবার মিশরকে হারিয়ে মরক্কো ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করে।