অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায় দিল্লি

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। বুধবার (১৪ আগস্ট) অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এই আগ্রহের কথা জানান তিনি।

সাক্ষাৎ শেষে ভারতীয় হাইকমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, আজ শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। কোনও এজেন্ডা ছিল না। দুই দেশের মানুষের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে চায় ভারত।

তবে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে , সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে হাইকমিশনারকে অবহিত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘গত সপ্তাহে ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্বাধীনতা প্রত্যক্ষ করেছে। বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে ছাত্র-জনগণের সম্মিলিত শক্তি কর্তৃত্ববাদ ও নিপীড়নের শক্তির বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। বৈষম্যমূলক সরকারি চাকরিতে নিয়োগ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নির্ভীক ছাত্র আন্দোলন অচিরেই একটি নিয়মভিত্তিক, ন্যায়পরায়ণ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য দেশব্যাপী বিপ্লবী সংগ্রামে রূপ নেয়। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্র ও জনগণের অনুরোধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাল ধরতে সম্মত হন।’

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের কাজ হচ্ছে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং অর্থনীতিকে সঠিক পথে আনা। জনগণের, বিশেষ করে যুবসমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকার অর্থবহ সংস্কার ও দীর্ঘস্থায়ী রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে উত্তরণ নিশ্চিত করা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এসময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে তার নতুন দায়িত্ব গ্রহণে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ভারত সরকার ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়। আগামী দিনে আরও বেশি করে ‘জনকেন্দ্রিক সম্পৃক্ততার’ ওপর জোর দেন তিনি। বিশেষ করে সীমান্ত হত্যা বন্ধ, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জোর দেন তিনি।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের ঘটনাবলি সম্পর্কে ‘অত্যন্ত অতিরঞ্জিতভাবে’ ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচারণার কথাও উল্লেখ করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে আসা এ ধরনের বক্তব্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সহায়ক নয়।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘সরকার সব ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনও সহিংসতা বা ভীতি প্রদর্শন সহ্য করবে না।’ তিনি আরও বলেন, সব ধর্মীয় গোষ্ঠী ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।